ঘড়ি দেখে অসুখ আসে না বুঝতে হবে ডিএসসিসিকে

প্রথম আলো

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার মানুষ ১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকে ওষুধ কিনতে পারবে না। জরুরি প্রয়োজনে ওষুধ কিনতে না পারলে মানুষ ওষুধ সেবনও করতে পারবে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ গতকাল সোমবার যে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তাতে পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে। এ সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে।

মানুষ দিনরাতের কোন সময়ে গুরুতর অসুস্থ হবে, এ কথা কেউ বলতে পারে না। গভীর রাতে বা ভোররাতে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। অসুস্থ হলে তখনই তাঁর ওষুধের দরকার হতে পারে। কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলেছে , ওষুধ যা কেনার রাত ১২টার আগে কিনে রাখতে হবে। হাসপাতালের রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ রাত দুইটার আগে কিনে রাখতে হবে।

কার কখন কী ওষুধ লাগবে তা কি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানে? কর্তৃপক্ষ বলেছে, ১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টায় সাধারণ ওষুধের দোকান বন্ধ করতে হবে। আর ‘হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব ওষুধের দোকান’ রাত দুইটায় বন্ধ করতে হবে।

এ আদেশ মেনে ওষুধের দোকানমালিকেরা দোকান বন্ধ করে দিলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ কি একবারও তা চিন্তা করেছে?
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে সারা দেশের রোগী আসে। রোগী আসে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগ খোলাও থাকে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সব সময় সব ওষুধ পাওয়া যায় না। কিছু ওষুধ হাসপাতালের বাইরে থেকে কিনতে হয়। রাত আড়াইটায় ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আসা রোগীর কোনো ওষুধের দরকার হলে সেই ওষুধ কোথা থেকে আসবে, এর জন্য কি রোগীকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে?

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে আছে মিটফোর্ড ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো দুটি বড় হাসপাতাল। জরুরি চিকিৎসায় মানুষ এ দুটি হাসপাতালেও যায়। কিন্তু রাত ১২টার পর ওষুধ পাওয়া না গেলে মানুষ কেন এসব হাসপাতালে যাবে।
রাত ১২ বা ২টার পর ওষুধ পাওয়া না গেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মানুষ কী তাহলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে যাবে নাকি দক্ষিণের হাসপাতালে রোগী ভর্তি রেখে ওষুধ কিনতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওষুধের দোকানে যাবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ওষুধের দোকান বন্ধ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা অবশ্য এখনো জানা যায়নি।

রাত ১২টা বা রাত ২টার পর ওষুধের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। দেশের বাকি ১১টি সিটি করপোরেশন এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শোনা যায়নি। এ ছাড়া দেশের বাকি শহর, বন্দর, উপজেলা সদর ও গ্রামের ওষুধের দোকানের ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত এখনো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ গণবিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে। সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত সব এলাকায় শৃঙ্খলা আনয়ন ও ঢাকা শহর পরিচালনায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সব দোকানপাট, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি রাত আটটা থেকে বিভিন্ন সময় সূচি অনুয়ায়ী বন্ধ করতে হবে। ওষুধের দোকানের ক্ষেত্রে রাত ১২টা থেকে তা কার্যকর হবে।

সারা দেশে প্রায় দেড় লাখ ওষুধের দোকান আছে। অসুস্থ হলে মানুষ প্রয়োজনে সবচেয়ে বেশি সেবা নেয় এসব দোকান থেকে। ওষুধের দোকান থেকে মানুষ চিকিৎসার পরামর্শ নেয়, ওষুধ কেনে। এ প্রয়োজন রাত দুইটার পর হয়, রাত তিনটার পর হয়, ভোররাত চারটায়ও হয়। জরুরি প্রয়োজন কোনো সময় মানে না। ঘড়ি দেখে অসুখ আসে না। ওষুধের প্রয়োজন মানুষের ২৪ ঘণ্টার। এটা জরুরি প্রয়োজন। এ জন্য ২৪ ঘণ্টার জরুরি সেবাও প্রয়োজন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে এটা বুঝতে হবে।