কোটাব্যবস্থার যুক্তিসংগত সংস্কার চায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার যুক্তিসংগত ও বাস্তবসম্মত সংস্কার করা যেতে পারে বলে মনে করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘অনেক বছরের ব্যবধানে, বিশেষত মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পার হওয়ার পর পূর্বেকার কোটাব্যবস্থার যুক্তিসংগত ও বাস্তবসম্মত সংস্কার হতে পারে’। যাতে নতুন প্রজন্মের সত্যিকার মেধাবীরা বঞ্চিত না হয়।

কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের নতুন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর কার্যনির্বাহী সভাপতি নূরুল আলম ও মহাসচিব হারুন হাবীব যৌথ বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, কোটাব্যবস্থা যেমন সংস্কার করতে হবে, তেমনি খেয়াল রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেন স্বাধীনতাবিরোধীরা অনুপ্রবেশ করতে না পারে। দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় বীরদের আত্মত্যাগকে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হলে তা হবে দেশের জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক ও উদ্বেগজনক।

বিবৃতিতে বলা হয়, শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কোটাব্যবস্থার প্রচলন আছে। দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তর প্রজন্মের জন্য সম্মানের ব্যবস্থা। সে কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা চালু করেছিলেন।

কিন্তু ১৯৭৫ সালের রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ ২১ বছর মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাবিদ্বেষী সামরিক শাসক ও তাঁদের রাজনৈতিক অনুসারীরা ক্ষমতায় থাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা কোটার সুবিধা পাননি। উল্টো অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, ওই সময় সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের ফলে সরকার সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মনে করে, এই পরিপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত সঠিক ও সুবিবেচনাপ্রসূত ছিল না।

এরপর মুক্তিযোদ্ধাসন্তানদের পক্ষ থেকে পরিপত্রের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। হাইকোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্রটি বাতিল ঘোষণা করে আদেশ দেন। সরকারের পক্ষ থেকে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। তারপরও আন্দোলন দৃশ্যমান হচ্ছে।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতারা নতুন প্রজন্মের নাগরিকদের জাতির শ্রেষ্ঠ সময় মুক্তিযুদ্ধকে জানার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাঁদের সিংহভাগ ছিলেন গ্রাম–গঞ্জের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁরা কয়েক যুগ ধরে উপেক্ষিত ও অবহেলিত থেকেছেন। কিছু উন্নয়নের পরও জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সমাজ এখনো পিছিয়ে আছে। পিছিয়ে আছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা। এ জন্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তাঁদের সবার জন্য বিবেচনাপ্রসূত হারে কোটার ব্যবস্থা অবশ্যই যুক্তিসংগত। তবে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার যুক্তিসংগত ও বাস্তবসম্মত সংস্কার করা যেতে পারে।