সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি: মাহ্‌ফুজ আনাম

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে সব ধরনের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম। তিনি বলেছেন, সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেতু হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে সংবাদমাধ্যম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন মাহ্‌ফুজ আনাম। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি ও সমন্বয়ক কমিটির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আজ শনিবার সম্পাদক পরিষদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই সভার কথা জানানো হয়েছে।

মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, এ মুহূর্তে দক্ষ সরকার দৃশ্যমান হওয়া জরুরি। একই সঙ্গে নতুন নেশনের ভিশন (জাতির লক্ষ্য) স্পষ্ট করতে হবে। সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেতু হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে সংবাদমাধ্যম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের আশ্বস্ত করে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, গণমাধ্যমও সংস্কার ও নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থেকে কাজ করতে চায়। তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে সব ধরনের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের রূপান্তরমূলক এ যাত্রায় অংশীদার হতে চায় সম্পাদক পরিষদ।

কীভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামকরণ হলো, কীভাবে আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছিল, তা সভায় বিস্তারিত তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বাংলাদেশকে কেন্দ্রে রেখে কীভাবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ করা যায়, সে লক্ষ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ছাপা পত্রিকার প্রশংসা করে বলেন, জুলাইয়ের কঠিন দিনগুলোয় যখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় সঠিক খবর পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন ছাপা পত্রিকাই ছিল ভরসা। অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে ছাপা পত্রিকা সংগ্রহের কথা জানিয়েছেন তিনি।

লিয়াজোঁ কমিটির সাবেক সমন্বয়ক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, গণ-অভ্যুত্থান ছিল একটি সমন্বিত প্রয়াস। নব্বইয়ে যে একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছিল, তা এক-এগারোর মধ্য দিয়ে ভেঙে যায়। তখন থেকে জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার জায়গা ধূলিসাৎ হয়েছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপসাধনে সব স্তর থেকেই লড়াই হয়েছে।

মাহফুজ আলম আরও বলেন, ‘আমাদের জনগণ অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ। কিন্তু সবাইকে এক বলয়ে আনার অপচেষ্টার ফলে এই ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। নতুন বাংলাদেশে সবাইকে কীভাবে ধারণ করা যায়, সেটাই এখনকার আলোচনা।’

বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে কীভাবে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি হলো, তা অনুসন্ধানের পাশাপাশি দেশকে একটি সভ্যতাগত রূপান্তরের (সিভিলাইজেশনাল ট্রান্সফরমেশন) মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন মাহফুজ আলম। তাঁর মতে, এখনো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা রয়ে গেছে, এর বিলোপ করে নতুন বন্দোবস্ত জরুরি।

সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি থেকে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (নাসির আব্দুল্লাহ), আকরাম হুসাইন, ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান, মামুন আব্দুল্লাহিল ও আরিফুল ইসলাম আদীব; সমন্বয়কদের মধ্যে সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নাগরিক কমিটি থেকে প্রতিনিধি হিসেবে সামান্তা শারমীন উপস্থিত ছিলেন।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, দেশ রূপান্তর সম্পাদক মোস্তফা মামুন, সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্‌ফুজ আনাম।