দুপক্ষের সম্মতি, বিয়ের ব্যবস্থা করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ

হাইকোর্ট ভবন
ফাইল ছবি

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় ভুক্তভোগী ও আসামির মধ্যে কারাগারে বিয়ের আয়োজন করতে লালমনিরহাটের কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বিয়ের বিষয়ে দুপক্ষের সম্মতি আছে বলে আদালতকে জানানোর পর এ আদেশ দেওয়া হয়।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ আদেশ দেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়ন করতে লালমনিরহাটের কারা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর তথ্যমতে, ওই মামলায় গত জুনে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান আসামি মো. রকিবুজ্জামান রকিব। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত জামিন স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। পাশাপাশি আট সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করে। অন্যদিকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আসামিপক্ষ আবেদন করে। পৃথক আবেদন আজ একসঙ্গে শুনানির জন্য ওঠে।  

আদালতে রকিবুজ্জামানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. ওয়াজি উল্লাহ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী নার্গিস তানজিমা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়েম মুরাদ। আদেশের আগে আদালত মামলার বাদী মেয়েটির বাবা এবং কারাগারে থাকা আসামি রকিবুজ্জামানের ভাইয়ের বক্তব্য শোনেন।  

পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়েম মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিয়ের শর্তে রকিবুজ্জামানের জামিন প্রার্থনা করা হয়। আপিল বিভাগ জামিন না দিয়ে কারা অভ্যন্তরে তাঁদের (ভুক্তভোগী মেয়ে ও আসামি) বিয়ের আয়োজন করতে লালমনিরহাটের কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন।’

আসামিপক্ষের আইনজীবীর তথ্যমতে, অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মেয়েটির বাবা লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার রকিবুজ্জামান ও তাঁর পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল ওই মামলাটি করেন। পরদিন মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয় এবং আসামি রকিবুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মেয়েটি জবানবন্দি দেয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আসে তার বয়স ১৭ বছর। মেয়েটি সন্তানসম্ভবা (২০ সপ্তাহ) এবং সে তার বাবার কাছে ফিরে যায়। আর আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মামলার ৯ মাস আগে মেয়েটিকে নিয়ে যান আসামি। পরে তাঁদের বিয়ের কাবিননামাও তৈরি করা হয়।

হাইকোর্টের রকিবুজ্জামানকে দেওয়া জামিন স্থগিতের পর তা প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করা হয় বলে জানান তাঁর আইনজীবী মো. ওয়াজি উল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আবেদনে মামলার বাদী তথা ভুক্তভোগী মেয়ের বাবা এবং আসামিপক্ষের মধ্যে আপসনামা আপিল বিভাগে দাখিল করি। আপসনামায় মেয়ের বাবা বলেছেন, মেয়ের ইচ্ছানুয়ায়ী স্থানীয়ভাবে বিষয়টি আপস হয়েছে। আইনানুগভাবে আসামির সঙ্গে মেয়েকে পুনরায় বিয়ে দেওয়া হবে। দুপক্ষই এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে আপস করেছে, এই শর্তে যে ভুক্তভোগী মেয়ে ও আসামির মধ্যে পুনরায় বিয়ে হবে। আদালত মেয়েটির বাবার বক্তব্যও শোনেন। আসামি যেহেতু কারাগারে। আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে যেন তাঁদের বিয়ের ব্যবস্থা করে, সে জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বিষয়টি ৪ ডিসেম্বর কার্যতালিকায় আসবে। তখন বিয়ের কাবিননামাসহ অন্যান্য কাগজপত্র আমাদের দাখিল করতে বলেছেন আপিল বিভাগ।’