ঢাকার তাপমাত্রাও উঠল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে

আজ বর্ষবরণ উৎসবে যোগ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসা অনেকের হাতেই ছিল ছাতা
ছবি: দীপু মালাকার

এবারের বৈশাখের প্রথম দিনটি ঢাকার তাপমাত্রার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঘরের ভেতরে যাঁরা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকছেন, তাঁরা হয়তো বুঝতে পারবেন না। কিন্তু নানা কাজে বা পয়লা বৈশাখের উৎসবে যোগ দিতে যাঁরা দিনে ঘরের বাইরে বের হয়েছেন, তাঁরা টের পেয়েছেন গরম কাকে বলে। আজ রাজধানীতে গত ৫৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত দুটি দিনের একটি ছিল।

আজ গ্রীষ্মের প্রথম দিনে ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে বেলা দেড়টায়। এ সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। এর আগে একবার ২০১৪ সালের একই দিনে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল ঢাকার তাপমাত্রার পারদ একই উচ্চতায় উঠেছিল। অর্থাৎ ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল। এর আগে এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা উঠেছিল ১৯৬৫ সালে—৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১৯৬০ সালে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বর্ষবরণ উৎসবে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে শিশুটি। রোদ থেকে বাঁচাতে তাকে কাপড়ে ঢেকে নিয়েছেন অভিভাবক
ছবি: দীপু মালাকার

কয়েক দিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বড় অংশজুড়ে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত দেশের আটটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যায়। আজ সে সংখ্যা ১১টিতে পৌঁছেছে। নতুন করে যুক্ত হওয়া তিনটি এলাকার একটি ঢাকা। সাধারণত কোনো এলাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেখানে মৃদু দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেখানে মাঝারি দাবদাহ এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তীব্র দাবদাহ চলছে বলে ধরা হয়।

ঢাকায় গতকাল (১৩ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দমশিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তার আগের দিন ((১২ এপ্রিল) ৩৮ দশমিক ৯, তার আগের দিন (১১ এপ্রিল) ৩৮ দশমিক ৫ এবং তার আগের দিন (১০ এপ্রিল) ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ রাজধানীর এই কয়েক দিনে নিয়মিত তাপমাত্রা বেড়ে আজ প্রচণ্ড দাবদাহ শুরু হয়েছে।

এক ছাতার নিচে তিনজন
ছবি: দীপু মালাকার

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, টানা ১০ দিন ধরে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে মেঘমালার দেখা নেই। আর বছরের ওই সময়টা সূর্যকিরণ সবচেয়ে সরাসরি বাংলাদেশের ওপরে পড়ে। টানা ওই গরমে তাপমাত্রা পুঞ্জীভূত হয়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে গেছে।

আবহাওয়াবিদেরা অবশ্য বলছেন, আগামীকাল ঢাকার তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অর্থাৎ একই ধরনের গরম থাকার আশঙ্কা আছে। তবে দেশের উত্তর–পশ্চিম অংশ দিয়ে কিছুটা মেঘ আসা শুরু করেছে। এতে অবশ্য দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তবে ঢাকাসহ দেশের বাকি এলাকায় তাপমাত্রা না কমার সম্ভাবনাই বেশি।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নন্দন মুখার্জি প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে মৌসুমি বায়ুর প্রবাহের মধ্যে একটি পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক আবহাওয়ায় যে পরিবর্তন এসেছে, তার প্রভাব বায়ুপ্রবাহের মধ্যেও পড়ছে।

নন্দন মুখার্জি বলেন, সাধারণত বছরের এই সময়ে মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে বাতাসে জলীয়বাষ্প নিয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে আকাশে কিছুটা মেঘ, বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হয়ে থাকে। সাধারণত বৈশাখের আগেভাগে বাংলাদেশে কালবৈশাখী দেখা যায়। এবার তা–ও দেখা যায়নি। এ ধরনের পরিবর্তন মাথায় রেখে জীবনযাত্রার পরিকল্পনা এবং কৃষিব্যবস্থাকে সাজাতে হবে।

আরও পড়ুন

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঢাকায় উত্তাপের পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার সমস্যা এখনো কাটেনি। অর্থাৎ বাতাসে জলীয়বাষ্প বা আর্দ্রতা কম থাকায় মানুষের শরীরে জ্বালাপোড়া করা এবং ঠোঁট-চামড়া ফেটে যাওয়ার সমস্যা আরও বেড়েছে। আজ সকালে ঢাকার সর্বোচ্চ আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩২ শতাংশ, যা সাধারণত এই সময়ে ৭২ থেকে ৮২ শতাংশ থাকে।

ঢাকায় ছাতা-পাখার বিক্রি বেড়েছে
ছবি: দীপু মালাকার
আরও পড়ুন

আবহাওয়াবিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের তাপমাত্রায় নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিয়ে হঠাৎ করে হিট স্ট্রোক হতে পারে। ডায়রিয়া, উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। ফলে জরুরি কাজ ছাড়া এ সময়ে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। আর যাঁরা রোজা রেখেছেন, তাঁদের ইফতার ও সাহ্‌রিতে প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে। সঙ্গে ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন

ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত এপ্রিল–মে মাসে দেশে কালবৈশাখী ও সামান্য বৃষ্টি এবং মেঘ দেখা দিত। এবার তার ছিটেফোঁটা দেখা যাচ্ছে না। এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে স্থায়ী ধরন হিসেবে দেখা দিচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। নয়তো দেশের মানুষের স্বাস্থ্য, কৃষি ও খাদ্যের ক্ষেত্রে এর প্রভাব মারাত্মক রূপ নিতে পারে।

আরও পড়ুন