পিলখানা হত্যা মামলা পুনঃ তদন্তসহ ৮ দাবি তৎকালীন বিডিআরের সদস্যদের স্বজনদের
পিলখানা হত্যা মামলা পুনঃ তদন্তসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে কারাগারে থাকা তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদস্যদের স্বজনেরা।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। কারা নির্যাতিত বিডিআর পরিবারের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
কারাগারে থাকা তৎকালীন বিডিআরের এক সদস্যের সন্তান আবদুল্লাহ আল মামুন সংবাদ সম্মেলনে আট দফা দাবি তুলে ধরেন। তাঁর তুলে ধরা দাবিগুলোর মধ্যে আছে ১৬ বছর ধরে কারাগারে থাকা নির্দোষ সব বিডিআর সদস্যকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। হাইকোর্টে করা রিট অনুযায়ী, বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার দ্রুত পুনঃ তদন্ত শুরু করতে হবে। তদন্ত যাতে সঠিক ও নিরপেক্ষ হয়, তা জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। নিরীহ বিডিআর সদস্যদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ফলে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, এর সঠিক কারণ উদ্ঘাটন করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। সব বিডিআর সদস্যকে (প্রায় ২৮ হাজার ৫২০ জন) চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। সব শহীদ সেনা, বিডিআর ও ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ (বেতন, ভাতা, পেনশন) দিতে হবে, পুনর্বাসন করতে হবে। বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) নামে বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) প্রতিস্থাপন করতে হবে। প্রতি বছরের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করতে হবে।
আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আধা সামরিক বাহিনী হিসেবে বিডিআরের একটি আইন আছে। সেই আইনে বিচারে সাজা সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হলো কেন? রিমান্ডের নামে প্রত্যেক বিডিআর সদস্যকে নির্যাতন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ফয়জুল আলম বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন সরকারের ইন্ধনে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৮ হাজার ৫১৯ বিডিআর সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। অনেককে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কারাদণ্ডের সাজা শেষ হওয়ার পরও কারাগার থেকে তাঁরা জামিনে বের হতে পারেননি। কারণ, তাঁদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা রয়েছে। অথচ প্রত্যেক নাগরিকের জামিন পাওয়ার অধিকার আছে। যেসব বিডিআর সদস্য কারাবন্দী আছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একদিকে তাঁদের জীবন, আরেক দিকে তাঁদের সন্তানের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। নিরপরাধ বিডিআর সদস্যরা যেন সব মামলা থেকে অব্যাহতি পান। যেন কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন, তাঁদের যেন চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।
ফয়জুল আলম আরও বলেন, তৎকালীন সরকার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়েছে। বিডিআর সদস্যদের দাবিদাওয়া নিয়ে তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান ও বিজিবিপ্রধানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। প্রতিটি জেলায় মানববন্ধন করেছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও কারাবন্দী সাবেক বিডিআরের এক সদস্যের সন্তান আইনজীবী আবদুল আজিজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৫৫ জন বিডিআর সদস্য কারাগারে মারা গেছেন। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বাধীন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি। এই কমিটিতে শহীদ পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার থেকে সদস্য রাখার দাবি জানান তিনি।
আবদুল আজিজ আরও বলেন, গত ১৬ বছরে বিডিআর সদস্যদের একটি জামিনের আবেদনেরও শুনানি হয়নি। শুনানির আগামী তারিখে যেন কারাবন্দী বিডিআর সদস্যদের জামিন হয়।