কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত কাজের অংশ হিসেবে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের সদস্যরা ৪ আগস্ট রংপুরে যাবেন। সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ ছয় ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন তাঁরা। রংপুর সার্কিট হাউসে ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।
সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এসব তথ্য জানান তদন্ত কমিশনের সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান। এ সময় কমিশনের অপর দুই সদস্য বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠনসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন আজ বৃহস্পতিবার জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিশন তদন্তকাজ শেষ করে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৬ জুলাই সংঘটিত ঘটনায় ৬ জন নিহত হওয়া এবং সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে দায়িত্ব দিয়ে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করে ১৮ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিশন তদন্ত কাজ শেষ করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আজ জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১৮ জুলাইয়ের প্রজ্ঞাপন রহিত করা হলো, এ সত্ত্বেও ওই প্রজ্ঞাপনের অধীন গৃহীত কার্যক্রম এই প্রজ্ঞাপনের অধীন গৃহীত হয়েছে বলে গণ্য হবে।
তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিশন আজ বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়াম ভবনের নিচতলায় অবস্থিত সুপ্রিম কোর্ট মেডিয়েশন সেন্টার (সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় অবস্থিত তদন্ত কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়) সভায় বসেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিশনের সভাপতি।
‘রংপুর থেকে শুরু করছি’
তদন্ত কমিশনের সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান বলেন, ‘নতুন কমিশন গঠনের পর নিজেরা বসেছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তদন্তকাজ পরিচালনার জন্য অফিস থাকতে হবে, যেটি এর আগে বলেছিলাম। অফিস নির্ধারণ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের মেডিয়েশন সেন্টার। এই অফিস যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এখানে সবাই চিঠি–তথ্যাদি পাঠাতে পারবেন। পাশাপাশি একটি ই–মেইল ([email protected]) খোলা হয়েছে। এই ই–মেইলের মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যাবে। এই ঠিকানায় দেশের যেকোনো নাগরিকের কাছে কোনো তথ্য–উপাত্ত থাকলে, তারা যদি নাম গোপন করে চান, তথ্য–উপাত্ত পাঠাতে পারবেন। তদন্তকাজের অংশ হিসেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৪ আগস্ট প্রথমে রংপুরে যাব। রংপুরে গিয়ে সশরীর ঘটনা সংঘটনের স্থান পরিদর্শন করব। প্রয়োজনীয় সাক্ষী যাঁরা ওখানে আছেন, সাক্ষ্য গ্রহণ করব।’
রংপুর সার্কিট হাউসে ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ে একটি সময়সূচি তুলে ধরেন বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান। নিহত মো. আবু সাঈদের বিষয়ে ৫ আগস্ট; নিহত সাজ্জাদ হোসেন, মোসলেম উদ্দীন মিলন ও মো. মানিক মিয়ার বিষয়ে ৬ আগস্ট এবং নিহত মো. মেরাজুল ইসলাম ও মো. আব্দুল্লাহ আল তাহের বিষয়ে ৭ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।
তদন্ত কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘প্রতিদিনই সকাল নয়টা থেকে সার্কিট হাউসে উপস্থিত যেসব ব্যক্তি এসব ঘটনা সম্পর্কে জানেন বা তথ্য–উপাত্ত আছে, তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। রংপুর থেকে শুরু করছি, ক্রমান্বয়ে আমরা সব জায়গায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব। সেখানে ক্ষয়ক্ষতি, মৃত্যু ও সহিংসতা—এসব ব্যাপারে আমরা তদন্তকাজ পরিচালনা করব।…আগামীকাল শুক্রবার থেকে সেখানে (রংপুরে) মাইকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ঘটনাস্থল এবং আশপাশের এলাকায় মাইকিং করে আহ্বান করা হবে যে যাঁরা যাঁরা সাক্ষী দিতে চান, তাঁরা যেন আসেন।’
সাক্ষীদের নির্বিঘ্নে সাক্ষ্য দেওয়া নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিয়ে করা এক প্রশ্নে তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে বলতে চাই, এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাঁরা যাঁরা সাক্ষ্য দিতে আসবেন, সেসব ব্যক্তিদের সাক্ষ্য দিতে আসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিশ্চিত করবেন। কোনোভাবেই কোনো সাক্ষীকে ভয়ভীতি বা কোনো রকম কিছু প্রদর্শন করা যাবে না। এ ব্যাপারে কমিশন কাউকে ছাড় দেবে না।’ কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের সঙ্গে কথা বলবেন কি না, অপর এক প্রশ্নে বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান বলেন, ‘ডেফিনেটলি, আমরা সবার সঙ্গে কথা বলব।’