বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেবে পুলিশ, কোথায় তা ঠিক হয়নি
বিএনপিকে ঢাকায় মহাসমাবেশের অনুমতি দেবে পুলিশ। তবে রাজধানীর কোন জায়গায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।
ঢাকার নয়াপল্টনে নিজেদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ২৮ অক্টোবর বিএনপি মহাসমাবেশ করতে চায়। এই মহাসমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয় ১৮ অক্টোবর। এর তিন দিনের মাথায় গত শনিবার (২১ অক্টোবর) সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদন করে বিএনপি।
ডিএমপি সূত্র বলছে, নয়াপল্টনে বিএনপিকে মহাসমাবেশের অনুমতি না–ও দেওয়া হতে পারে। এর বদলে তাদের ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছের গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার জন্য বলা হতে পারে পুলিশের পক্ষ থেকে।
মহাসমাবেশে যোগ দিতে ঢাকার বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ আসবে, নয়াপল্টনে মূল রাস্তা আটকে সমাবেশ হলে ঢাকায় ব্যাপক যানজট হবে—এ বিষয়কে সামনে এনে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা গোলাপবাগ মাঠে যাওয়ার জন্য বলা হতে পারে পুলিশের পক্ষ থেকে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশের অনুমতি চেয়ে কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে। আমরা আলোচনা করে দেখছি।’ তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশ নিয়ে পুলিশের মনোভাব নেতিবাচক নয়। তবে নগরবাসীর নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।
ঢাকায় গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের স্থান ঠিক করা নিয়ে এখনকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বিএনপি চেয়েছিল নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে। তবে পুলিশ নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দিতে চায়নি। বিষয়টি নিয়ে পরে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়। পরে গণসমাবেশের আগের দিন গোলাপবাগ মাঠে অনুমতি পায় বিএনপি।
বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এ সমাবেশে বিএনপি বিপুল মানুষের জমায়েত করবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও একই দিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সন্দেহ, মহাসমাবেশের নামে বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বসে পড়তে পারে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি সূত্র বলছে, বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে ডিএমপি সদর দপ্তরে কমিশনারের নেতৃত্বে চার দিন আগে একটি সভা হয়েছে। সভায় বিএনপিকে সমাবেশের জন্য পল্টনে অনুমতি না দিয়ে বিকল্প কোনো জায়গায় অনুমতি দেওয়ার কথা আলোচনা হয়। তবে মহাসমাবেশ ঘিরে নাশকতা হতে পারে, এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য পুলিশের কাছে নেই। যদিও সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের জন্য অনুমতি দেওয়া হতে পারে। সে জন্য তাদের সব প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে।
এদিকে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত রোববার রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও খিলগাঁও থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইউনুস মৃধাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপির দাবি, শনি থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের ৩০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত ৩২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ডিবির একটি সূত্র বলছে, দুর্গাপূজা শেষে গ্রেপ্তার অভিযান আরও জোরদার করা হতে পারে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি অপারেশনস) আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সমাবেশের নামে কেউ যদি আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়, জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।