ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ঢাকায় আসছেন ১০ সেপ্টেম্বর
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছেন। দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। তিন দশক পর ফরাসি কোনো প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকে অংশীদারত্ব বহুমুখী করার সুযোগ হিসেবে দেখছে প্যারিস।
সোমবার ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস তাদের এক্স (আগের নাম টুইটার) ও ফেসবুকে মাখোঁর সফরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ আশাবাদের কথা শুনিয়েছে। ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের তখনকার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরা বাংলাদেশে এসেছিলেন।
ফ্রান্স দূতাবাসের ফেসবুক ও এক্সে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ৯-১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে নয়াদিল্লি যাবেন। তারপর তিনি ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করবেন।
ফ্রান্স দূতাবাস বলছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরের মাধ্যমে দুই দেশের অংশীদারত্ব বহুমুখী করার একটি সুযোগ তৈরি হবে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে ব্যাপক সাযুজ্য রয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে মানবিক সহায়তা, বিশেষ করে নিয়মিত বন্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়ে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। শান্তি রক্ষা কার্যক্রম কিংবা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দান, যেকোনো আন্তর্জাতিক সহমর্মিতার উদ্যোগে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলেও উল্লেখ করেছে দূতাবাস।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের নভেম্বরে প্যারিসে দ্বিপক্ষীয় সফরে গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি এমানুয়েল মাখোঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফরের সময় দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের জন্য ব্যবসা, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় জোর দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্মতিপত্রে সই করে। এতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো যুক্ত রয়েছে।
দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক শেষে প্রচারিত যৌথ ঘোষণায় তখন বলা হয়, দুই দেশ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে একমত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নিয়মিত আলোচনা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। প্রয়োজনে সামর্থ্য অনুযায়ী এক পক্ষের চাহিদা অনুযায়ী অন্য পক্ষ তা সরবরাহ ও সহযোগিতা করবে। দুই দেশ তাদের এই সম্পর্কের একটি কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যে সহযোগিতার সব বিষয়ে নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক আলোচনা আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছে।
জানা গেছে, এমানুয়েল মাখোঁর ঢাকা সফরটি মূলত ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর প্যারিস সফরের ফলোআপ। ওই সময় নেওয়া দুই শীর্ষ নেতার সিদ্ধান্তের আলোকে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ঢাকায় আলোচনা হবে। কিন্তু তাঁর ঢাকা সফরের ঠিক দুই দিন আগেই বাংলাদেশ ঘুরে যাবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দুটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদের বাংলাদেশ সফর কৌতূহলোদ্দীপক বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা।