দুই নৌকাডুবির ঘটনায় আরও ১২ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার

লাশপ্রতীকী ছবি

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় আরও ১২ রোহিঙ্গা নাগরিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। মৃতদের মধ্যে ১৩ জন নারী ও ১৫টি শিশু। আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত এসব লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদীর জেটিঘাট এলাকা থেকে ৫টি লাশ উদ্ধার হয়। শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণপাড়া সমুদ্রসৈকত থেকে ৪ জন এবং পশ্চিম পাড়া জালিয়ারঘাট সমুদ্রসৈকত থেকে ৩ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে।

লাশ উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে লাশ উদ্ধারের বিষয়টি জেনেছেন। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে লাশগুলো দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সাবরাং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, নাফ নদী ও সাগর তীরবর্তী এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে রাতের আঁধারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ঢেউ ও ঝড়ের কবলে পড়ে দুটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ থাকা মানুষের লাশ ভেসে আসতে শুরু করেছে। উপজেলা প্রশাসন ও থানার সঙ্গে কথা বলে ভেসে আসা লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত সোমবার রাতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। নৌকাডুবির পর সাঁতরে কূলে ওঠা কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের জানিয়েছেন, একটি নৌকায় ২০-২৫ জন এবং অন্যটিতে ২৯ জনের মতো যাত্রী ছিল।

ওপারে সংঘাত, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে থেমে নেই মর্টার শেল ও শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণ। আজ ভোররাত থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত থেমে থেমে ওপার থেকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। মর্টার শেল, শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণের শব্দে এ পারের বাড়িঘর কেঁপে উঠছে। এতে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত টেকনাফের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।

টেকনাফ সীমান্তে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টেকনাফ সীমান্তের পূর্ব পাশে মিয়ানমারের সুধাপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, উকিলপাড়া, নুরুল্লাপাড়া গ্রামকে ঘিরে মংডু টাউনশিপে গৃহযুদ্ধ চলছে। মিয়ানমারে আরাকান আর্মি ও সেই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় টেকনাফ সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে রাতের আঁধারে নৌকায় করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিজিবির সদস্যদের বাধায় অনেককে মিয়ানমারে ফিরে যেতে হয়েছে।

টেকনাফ সদর ও পাশের সাবরাং ইউনিয়নের বিপরীতে মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপ। মাঝখানে চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদী দুই দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। মংডু টাউনশিপে বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দুটি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। ওই দুটি ব্যাটালিয়ন দখলকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে লড়াই-সংঘাত চলছে। সম্প্রতি মংডু টাউনশিপের আশপাশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২০টি সীমান্তচৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। এখন মংডু দখলের জন্য লড়ছেন তাঁরা।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, টেকনাফ সীমান্তে বসবাসরত মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে যাতে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য টেকনাফে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার এবং কড়া নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।