ডায়াবেটিক রোগীর জন্য ‘আদর্শ খাবার’ যেগুলো

ডায়াবেটিস হলেই যে অনেক ধরনের খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে, এমনটি নয়প্রতীকী ছবি

জীবনের যেকোনো সময় মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে রোগীর বিভিন্ন অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে থাকলে তার ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বৈশ্বিক ফর্মুলা হলো থ্রি ডি—ডায়েট, ডিসিপ্লিন ও ড্রাগ। এই তিন ডি-র ভেতর ডায়েট অর্থাৎ খাদ্যাভ্যাস হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রোগীদের বেশির ভাগই সবচেয়ে বেশি অনিয়ম করেন খাবার-ব্যবস্থাপনায়।

প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকা পৃথকভাবে নির্ণয় করা হয়। বয়স, ওজন ও উচ্চতা, কাজের ধরন, কায়িক শ্রমের পরিমাণ, জীবনযাপন পদ্ধতি, আর্থিক অবস্থা—সবকিছু বিবেচনায় রেখে এ তালিকা করা হয়। ডায়াবেটিস হলেই যে অনেক ধরনের খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে, এমনটি নয়।

তবে খাবার নির্বাচনে সতর্ক ও সুশৃঙ্খল হতে হবে। পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে রোজ একই ধরনের খাবার না খেয়ে বৈচিত্র্য আনারও চেষ্টা করতে হবে। অন্য সাধারণ মানুষের মতো একজন ডায়াবেটিস রোগী সব কটি খাদ্য উপাদান মানে শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন ইত্যাদি গ্রহণ করতে পারেন।

ডায়াবেটিস ধরা পড়লেই চিকিৎসকেরা প্রথমেই সাদা চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিতে বলেন। শর্করা এবং চিনি অন্যান্য খাবারেও আছে। কাজেই সাদা চিনি সরাসরি বাদ দিলেও কোনো সমস্যা নেই। শর্করাসমৃদ্ধ খাবার হলো ভাত, নুডলস, রুটি ইত্যাদি। তবে এই খাবারগুলো সীমিত পরিমাণে খেতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে থাকা উচিত ক্যালরির সুষম বণ্টন। এতে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্যালরি আসবে শর্করা থেকে, বাকি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আমিষ বা প্রোটিন থেকে এবং বাকিটা স্নেহ বা ফ্যাট থেকে।

সারা দিনের মোট ক্যালরির প্রায় ৩০ শতাংশ সকালের নাশতা থেকে, ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দুপুরের খাবার থেকে এবং ২০ শতাংশ রাতের খাবার থেকে গ্রহণ করতে হবে। বাকি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ দুই থেকে তিনবারের হালকা স্ন্যাক্স হিসেবে নিতে হবে। খাবার বাছাইয়ের সময় খেয়াল রাখতে হবে খাবারে গ্লাইসিমিক ইনডেক্স বা জিআই কতটুকু আছে। যেসব খাবারে জিআইয়ের মান কম সেগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর।

সব ধরনের শাক, ডাল, পাতলা দুধ, মাশরুম, বাদাম, পানিযুক্ত সবজি ইত্যাদি নিম্ন জিআইযুক্ত খাবার। মধ্যম জিআইযুক্ত খাবার হলো লাল চাল ও আটা, ভুট্টা, খই, মিষ্টি আলু, ব্রাউন নুডলস বা পাস্তা ইত্যাদি। আর উচ্চ জিআইযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে ময়দার রুটি বা পরোটা, আতপ চাল, পোলাও, খেজুর, তরমুজ, কচুমুখী ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিত এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিক রোগীদের আমরা সাধারণত লো-কার্বোহাইড্রেট ডায়েটের পরামর্শ দিই। এ ক্ষেত্রে ‘‘মেডিটেরিয়ান ডায়েট’’ বা মধ্যপ্রাচ্যের খাদ্যাভ্যাসটা খুব কার্যকর। এই খাবারগুলোতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাঁদের ডায়াবেটিস আছে তাঁরা ভাতের বদলে রুটি খেলে উপকার বেশি পাবেন। রুটি খেলে কী পরিমাণ ক্যালরি শরীরের ভেতরে গেছে, এটার একটা হিসাব রাখা যায়। ভাত খেলে সেই হিসাবটা রাখা একটু কঠিন।’

ডায়াবেটিক রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে দুধের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে ডা. মো. সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুধ সব মানুষের জন্যই জরুরি একটা খাদ্য উপাদান। একইভাবে ডায়াবেটিকদেরও দুধ খেতে হবে। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের দুধে ফ্যাট এবং সরজাতীয় উপাদান না থাকলে ভালো।’

এ ছাড়া বর্তমানে বাজারে ডায়াবেটিক রোগীর জন্য ‘স্পেশালাইজড মিল্ক’ পাওয়া যায়, যা দুধের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি একবেলা খাবারের আদর্শ বিকল্প হিসেবেও কাজ করে।