ঢাকার আদালতে নতুন পিপি-জিপি নিয়োগ হয়নি, বিচার বাধাগ্রস্ত

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত।ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ছবি: আসাদুজ্জামান

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের প্রায় দুই মাস হতে চললেও ঢাকার বিচারিক আদালতগুলোতে নতুন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) বা গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) নিয়োগ হয়নি।

দেশের মহানগর ও জেলার বিচারিক আদালতে যাঁরা রাষ্ট্রের হয়ে ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করেন, তাঁদের পিপি বলে। আর যাঁরা দেওয়ানি আদালতে সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, তাঁদের জিপি বলে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির অন্তত ১৫ জন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নেই। এ ছাড়া গত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া পিপি-জিপিদের অনেকে আদালতে আসছেন না। এতে গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলার বিচার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মামলার শুনানির তারিখ পেছাচ্ছে।

অভিজ্ঞ ফৌজদারি আইনজীবী ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য আমিনুল গণি টিটো প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুনসহ যেকোনো ফৌজদারি মামলায় দুটি পক্ষ থাকে। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা আদালতে থাকছেন না। তাহলে রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলবেন কে? রাষ্ট্রপক্ষ না থাকায় ঢাকার আদালতে ফৌজদারি মামলার বিচার থমকে আছে। এতে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে ১৫ বছর ধরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) দায়িত্ব পালন করেন আবদুল্লাহ আবু। সরকার পতনের পর থেকে তিনি আদালতে আসছেন না। অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৮ আগস্ট তাঁর নিয়োগ বাতিল করে। প্রধান পিপির দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশিষ্ট ফৌজদারি আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে। তাঁর নিয়োগের বিরোধিতা করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। পরে তিনি আর যোগদান করেননি। ফলে পদটি শূন্য রয়েছে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, ঢাকায় শতাধিক নিম্ন আদালত আছে। এসব আদালতে সরকারি কৌঁসুলির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এগুলোতে নতুন পিপি-জিপি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

ঢাকার আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগস্টের পর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতসহ বেশ কয়েকটি নিম্ন আদালতে আগের পিপিরা আসছেন না। তবে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-সহ কয়েকটি আদালতে পিপিদের কেউ কেউ আসছেন।

প্রশ্নপ্রত্র ফাঁসের আলোচিত একটি মামলায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর রায় দেন ঢাকার সিএমএম আদালত। এতে ১০ জনের সাজা হয়। খালাস পান ১১৪ জন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম রায় ঘোষণার দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নানাবিধ কারণে তিনি বেশ কয়েক দিন আদালতে যাচ্ছেন না।

অবশ্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে দায়িত্ব পালন করা একজন সরকারি কৌঁসুলি প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কয়েক দিন তিনি আদালতে যাননি। কিন্তু এক মাস ধরে নিয়মিত আদালতে যাচ্ছেন।

বিএনপি-সমর্থক কয়েকজন আইনজীবী প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগ দেওয়ার জন্য আইনজীবীদের একটি তালিকা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার আদালতে নতুন সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। শিগগিরই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হবে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের (সলিসিটর উইং) উপসলিসিটর (জিপি-পিপি) সানা মো. মাহ্‌রুফ হোসাইন আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জানামতে, ঢাকার নিম্ন আদালতে পিপি-জিপি নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না প্রথম আলোকে বলেন, সরকার পতনের দুই মাস পার হতে চলল। অথচ ঢাকার নিম্ন আদালতগুলোয় নতুন সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মামলার বিচার কার্যক্রমে স্থবিরতা চলছে। যত দ্রুত সম্ভব দক্ষ ও যোগ্য আইনজীবীদের মধ্য থেকে নতুন সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগের দাবি জানান প্রবীণ এই আইনজীবী।