কৌটায় পাওয়া যাবে ইলিশ, জনপ্রিয় হবে কি
প্রক্রিয়াজাতকরণের পর কৌটায় ভরে রাখা মাছ বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়। এগুলো ‘রেডি টু ইট’, অর্থাৎ কৌটা খুলেই খাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত করে কৌটায় মাছ বিক্রির প্রচলন নেই। তবে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে কৌটায় ইলিশ ও টুনা সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি বের করার কথা জানিয়েছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক।
গবেষকেরা বলছেন, এ পদ্ধতির মাধ্যমে ইলিশ ও টুনা মাছ কৌটায় তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণের জন্য অধিকতর গবেষণা করছেন তাঁরা। গবেষণাকাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও অন্তত ছয় মাস লাগবে। এরপর সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন সাপেক্ষে কৌটায় করে ইলিশ মাছ বাজারজাত করা সম্ভব হবে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান কাজী আহসান হাবীব। সহগবেষক ফিশিং অ্যান্ড পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রানা। তাঁদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি দলও আছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প থেকে দেওয়া অনুদানে এ গবেষণা করছেন তাঁরা।
গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এ গবেষণার জন্য এক কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অর্ধেক অর্থ গবেষণায় বাকিটা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ অন্যান্য কাজে ব্যয় হচ্ছে। প্রশিক্ষণের জন্য কক্সবাজারের তিনটি দল নির্বাচন করা হয়েছে। প্রতিটি দলের সদস্য ১০ জন।
গবেষণাকাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও অন্তত ছয় মাস লাগবে। এরপর সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন সাপেক্ষে কৌটায় করে ইলিশ মাছ বাজারজাত করা সম্ভব হবে।
গবেষক দলের প্রধান কাজী আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশি সময় ধরে মাছ সংরক্ষণে সফল হলে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হবে। আশা করি, সংরক্ষণের সময় বাড়াতে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের কাজ ছয় মাসের মধ্যে শেষ হবে।’
গবেষকেরা জানান, তাঁরা এমনভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে চান, যাতে মাছের টুকরা ভাঙবে না। থাকবে না কাঁটাও, অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাতের পর কাঁটা এত নরম হবে যে তা খেতে সমস্যা হবে না। কৌটা খুলেই মাছ খাওয়া যাবে। তবে দুই–তিন মিনিট গরম করে নিলে স্বাদ ভালো হবে। মাছে স্বাদ আনতে দেওয়া থাকবে মসলাও।
গবেষণার জন্য বিদেশ থেকে কৌটা আনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২০০ গ্রামের মতো মাছ রাখা যাবে। কৌটায় চার টুকরা ইলিশ থাকবে, দাম পড়বে আনুমানিক ৩২০ টাকা। আর টুনার কৌটা ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা যাবে। এসব কৌটায় মাছের মাথা ও লেজ দেওয়া হবে না।
কাজী আহসান হাবীব বলেন, গবেষণা সফল হলে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কাছে এ মাছ বাজারজাত করার জন্য অনুমোদন চাওয়া হবে। অনুমোদন পেলে বাজারজাত করা হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্প থেকে এ গবেষণায় অর্থায়ন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু এ প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে এক দফা। প্রকল্পটি আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা।
প্রকল্পটির উপপ্রকল্প পরিচালক মনীষ কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় ৩০টি গবেষণা প্রকল্পে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এর একটির আওতায় কৌটায় ইলিশ ও টুনা সংরক্ষণে গবেষণাকাজ চলছে।
এ প্রকল্পের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরামর্শক প্রথম আলোকে বলেন, কৌটায় মাছ প্রক্রিয়াজাত করার বিষয়টি ইতিবাচক। এতে দীর্ঘদিন মাছ সংরক্ষণ করা যাবে। রান্নার ঝামেলা থাকবে না। এ ক্ষেত্রে টুনা বেশি উপযোগী। কারণ, বঙ্গোপসাগরে এ মাছ প্রচুর পাওয়া যায় ও দামও কম। তিনি আরও বলেন, দাম কম হওয়ায় টুনা দ্রুত সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে বাজারে ইলিশের দাম এমনিতে বেশি। ফলে ইলিশ কতটা জনপ্রিয় হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।