সাদা পাউডার ও মৃত কুকুর নিয়ে প্রশ্ন

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সচিবালয়ে বুধবার দিবাগত রাতে আগুন লাগেফাইল ছবি

সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনায় সন্দেহজনক বেশ কিছু বিষয় সামনে এসেছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ থেকে নবম তলায় সাদা পাউডার পাওয়া গেছে। করিডরের মধ্যে কীভাবে সাদা পাউডার এল, সে প্রশ্ন উঠেছে। এটি কি দাহ্য নাকি চুন (ক্যালসিয়াম অক্সাইড), তা খতিয়ে দেখতে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত আট সদস্যের তদন্ত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে গতকাল শনিবার একাধিক সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে পাওয়া সাদা পাউডার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দুটি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার প্রতিবেদন আজ রোববার পাওয়া যাবে বলে সভায় জানানো হয়।

সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মৃত একটি কুকুর নিয়েও আলোচনা হয়। কুকুরটি কি আগুন লাগার আগে সেখানে ছিল, নাকি পরে উঠেছে, এ বিষয়ে জানতে চান একাধিক সদস্য। এই কুকুরটি কি সচিবালয়ে পালিত, নাকি আগে থেকে ছিল, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়। ভবনটিতে ফায়ার অ্যালার্ম ও পানি ছিটানোর নজেল নষ্ট কেন, তা নিয়ে বৈঠকে বুয়েটের একজন সদস্য প্রশ্ন তোলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে সাদা পাউডারের নমুনা সংগ্রহ করে গতকাল তা বুয়েট ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে মৃত কুকুরের নমুনা নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়।

গত বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ভবনটির ষষ্ঠ থেকে নবম তলায় অবস্থিত পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র, কম্পিউটার ও আসবাব পুড়ে যায়। আগুন লাগার কারণ ও উৎস অনুসন্ধানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বৃহস্পতিবার রাতে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ওসমান গনিকে। কমিটির প্রথম বৈঠক হয় গত শুক্রবার, দ্বিতীয় বৈঠক হয় গতকাল। আজও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। কাল ৩০ ডিসেম্বর কমিটিকে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে হবে। কমিটি গঠনের পর ১০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

গতকালের বৈঠকের বিষয়ে তদন্ত কমিটির কোনো সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আগুন লাগার ‘সময়কে’ (রাত পৌনে দুইটা) বিশেষ আমলে নিয়েছে তদন্ত কমিটি। রাতের বেলায় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

কমিটির সদস্য বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী প্রথম আলোকে বলেন, এখনো বলার মতো কিছু হয়নি। তদন্তের কাজ চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। এখন তা বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

২৫ ডিসেম্বর বুধবার ছিল বড়দিনের ছুটি। সেদিন সব সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ ছিল। তবু অস্থায়ী পাস নিয়ে বেশ কয়েকজন অপরিচিত মানুষ সচিবালয়ে ঢুকেছেন বলে বৈঠকে আলোচনা হয়। এরা কারা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গতকালের বৈঠকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধিদের ডাকা হয়। তাঁদের মন্ত্রণালয়ে কী কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা আজ রোববারের মধ্যে কমিটির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সময়ে আগুনের ব্যাপকতা কেন এত বেশি ছিল, সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে ৭ নম্বর ভবনের ফায়ার অ্যালার্ম ও পানি ছিটানোর নজেল নষ্ট দেখেন। কেন নজেল নষ্ট ছিল বা এটা আগে জানানো হয়েছিল কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয় বৈঠকে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কক্ষ কেন পুড়ে ছাই হলো তা–ও অনুসন্ধান করা উচিত বলে বৈঠকে আলোচনা হয়।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ থেকে তাঁদের অধীন সংস্থাগুলোর দপ্তরে অস্থায়ী অফিস করবেন।

অস্থায়ী পাসের জন্য বিশেষ সেল

বেসরকারি ব্যক্তিদের সচিবালয়ে প্রবেশে অস্থায়ী পাসের আবেদনের জন্য বিশেষ সেল গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অস্থায়ী প্রবেশ পাস সংক্রান্ত বিশেষ সেল’। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজনকে এ সেলে সংযুক্ত করে গতকাল অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব তৌহিদুল আলম ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মৃত্যুঞ্জয় বাড়ৈ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সচিবালয়ে প্রবেশের আগে আবেদন গ্রহণ করতে রাজধানীর আবদুল গণি রোডে ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে একটি অস্থায়ী সেল গঠন করা হয়েছে।