করোনা অতিমারি আমাদের অনেক ক্ষতি করে গেছে। তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে বেশি। তারা তাদের বইপুস্তক নিয়ে ঢুকে পড়েছে অনলাইনের রাজ্যে। আর সে কারণে তিন বছর ধরে আমাদের প্রাণের আয়োজন ডাচ্–বাংলা ব্যাংক–প্রথম আলো গণিত উৎসবও ঢুকে পড়ে স্ক্রিনের মধ্যে। গত বছর আমরা জাতীয় উৎসব নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি। আর আজ বৃহস্পতিবার পৌনে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী, খালি চোখে সুপারনোভা দেখার জ্যোতির্বিদ রাধা গোবিন্দ চন্দ্র ও সংযুক্তিই উৎপাদনশীলতার তত্ত্বের জনক ও গ্রামীণফোনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল কাদীরের বিদ্যালয়, যশোর জিলা স্কুলে শুরু হচ্ছে আঞ্চলিক গণিত উৎসব।
আর এর মাধ্যমে রাজধানীর বাইরে আবারও মুখর হবে খুদে গণিতবিদদের পদচারণে। চলতি মাসজুড়ে দেশের ২০টি বিভাগীয় ও জেলা শহরে আঞ্চলিক গণিত উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় পর্বের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য দল নির্বাচন এগোতে থাকবে।
প্রাক্–বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এখন প্রায় সব বিষয়েই অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো, মর্যাদাবান ও ‘কিং অব অল অলিম্পিয়াড’ হলো গণিত অলিম্পিয়াড। ১৯৫৯ সালে রোমানিয়াতে শুরু হলেও বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা এতে অংশ নিচ্ছে ২০০৫ সাল থেকে। শুধু আংশ নেওয়াতেই তারা থেমে নেই। এখন পর্যন্ত সেখান থেকে বাংলাদেশ ১টি সোনা, ৭টি রুপা, ৩২টি ব্রোঞ্জ ও ৩৮টি সম্মানসূচক স্বীকৃতি লাভ করেছে। মনে রাখা দরকার, শতাধিক দেশের প্রতিযোগী অংশ নেয়—এমন কোনো প্রতিযোগিতা থেকে সোনার পদক আমরা এখন পর্যন্ত কেবল গণিত অলিম্পিয়াডেই পেয়েছি।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে পদক পাওয়াটাই এই উৎসবের একমাত্র লক্ষ্য নয়। দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতের ভীতি কাটিয়ে তাদের গণিতে তথা সমস্যা সমাধানে পটু করাই এই গণিত আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। আর এই আন্দোলন ইতিমধ্যে দেশে ও বিদেশে নজর কেড়েছে। সরকারের উদ্যোগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন গণিত অলিম্পিয়াড পদ্ধতিতেই গণিত শিখন কার্যক্রম শুরু করেছে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় গণিত উৎসবের আয়োজন করছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। এই আন্দোলনের মূলে রয়েছে একদল স্বেচ্ছাসেবক। উৎসবের প্যান্ডেল বা মিলনায়তনের সাজসজ্জা, আসনবিন্যাস, পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, ফলাফল প্রকাশ কিংবা পদক তুলে দেওয়া—সবই করেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। হতে পারেন তিনি শিক্ষক, গুগল বা মাইক্রোসফটের কর্মকর্তা বা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। এঁদের মধ্যে অন্যতম প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্য ও গণিত অলিম্পিয়াড স্বেচ্ছাসেবক (মুভার্স) নামের একঝাঁক তরুণ।
গণিত উৎসব কেবলই একটি গণিত পরীক্ষা নয়, এটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মিলনমেলা। একদিকে পরীক্ষা শেষে শুরু হয় বন্ধুতা পর্ব, যেখানে একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হয়। সারি বেঁধে শিক্ষার্থীরা ভিড় করে গণিতের বইয়ের স্টলে। আবার কেউ কেউ প্রিয় স্যারের অটোগ্রাফ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চলতে থাকে হৈহুল্লোড় আর উচ্ছ্বাস। এ ছাড়া উৎসবে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করে, আর জবাব দেন শিক্ষকেরা।
পুরো উৎসবে আমরা সব সময় দেশপ্রেমের কথা বলতে থাকি, শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানের মাঠ পরিষ্কার করে। হাত উঁচু করে মাদক, মুখস্থ আর মিথ্যা থেকে দূরে থাকার অঙ্গীকার করে সবাই। কারণ, সবাই মিলে আমরা দেখতে চাই বাংলাদেশের জয়।
যশোর উৎসবসহ এবার উৎসবে অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এবারের উৎসবে আমরা খুঁজে ফিরব আমাদের প্রয়াত অভিভাবক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যারকে।
গণিতের এই আনন্দ আয়োজনে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ। পরীক্ষা পর্ব ছাড়া বাকি সব পর্বই সবার জন্য উন্মুক্ত। জয় হোক গণিত উৎসবের। উৎসবসংক্রান্ত তথ্য সব পাওয়া যাবে–
পুরো উৎসবে আমরা সব সময় দেশপ্রেমের কথা বলতে থাকি, শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানের মাঠ পরিষ্কার করে। হাত উঁচু করে মাদক, মুখস্থ আর মিথ্যা থেকে দূরে থাকার অঙ্গীকার করে সবাই। কারণ, সবাই মিলে আমরা দেখতে চাই বাংলাদেশের জয়।
যশোর উৎসবসহ এবার উৎসবে অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এবারের উৎসবে আমরা খুঁজে ফিরব আমাদের প্রয়াত অভিভাবক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যারকে।
গণিতের এই আনন্দ আয়োজনে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ। পরীক্ষা পর্ব ছাড়া বাকি সব পর্বই সবার জন্য উন্মুক্ত। জয় হোক গণিত উৎসবের। উৎসবসংক্রান্ত তথ্য সব পাওয়া যাবে– https://matholympiad.org.bd/