চাল-গম আমদানিতে ভারতের ‘কোটা সুবিধা’ নিতে চায় বাংলাদেশ
হঠাৎ বাড়তে শুরু করা চালের দাম নিয়ন্ত্রণে দুই দিক দিয়ে চেষ্টা শুরু করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার বৈঠকের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চালকলমালিক ও ব্যবসায়ীদের ডাকা হয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মান ও ধরনভেদে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে ছয় টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণ বোঝা এবং বাড়তি দাম কমানোয় করণীয় ঠিক করাই এ বৈঠকের উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে ভারত থেকে বার্ষিক কোটার (নির্ধারিত পরিমাণ) মাধ্যমে ৪৫ লাখ টন চাল ও গম আমদানির ব্যাপারেও দেশটির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে সরকার। কোটার মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি—দুই পর্যায়ে ওই খাদ্য আমদানি করা হবে। গত বছর এ নিয়ে দুই দফা আলোচনার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আবারও ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, দেশের বেশির ভাগ বাজারে মানভেদে চালের দাম ২ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সরু চালের দাম। তারপর বেড়েছে মাঝারি ও মোটা চালের দাম। প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দামও গত এক মাসে সাড়ে ৩ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বেড়ে খোলা আটা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় ও প্যাকেটজাত আটা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর প্রধান খুচরা বাজারগুলোয় সপ্তাহখানেক আগে যে মোটা চালের (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকা ছিল, তা এখন কিনতে হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম ও বিআর ২৮) কেজি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা। আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চাল ৬২ থেকে ৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬৮ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে। কিছু সরু চাল অবশ্য বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে।
দেশের শীর্ষ চালকলমালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার আমন চাল ৪৪ টাকা ও ধান ৩০ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করেছে। সাধারণত সরকার যে দামে চাল সংগ্রহ করে বাজারে চালের দাম তার চেয়ে দুই-তিন টাকা বেশি থাকে। গত বছরে উৎপাদিত আমনের চাল শেষের দিকে। তাই বোরো ধান ওঠার আগের দু-এক মাস ধান ও চালের দাম একটু বেশি থাকছে।
নওগাঁর ধান-চাল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এক–দুই মাস ধরে অল্প অল্প করে চালের দাম বাড়ছে। এ সময়ে সাধারণত চালের দাম একটু বাড়তির দিকে থাকে। বোরো ধান উঠলে আবার কমে আসবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বৈঠক ডেকেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি চালের মজুত বাড়ানো হলে এবং দরিদ্র মানুষের জন্য চালের সরবরাহ বাড়ানো গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে এবার আমনের উৎপাদন ভালো হয়েছে। বোরোতেও ভালো হবে আশা করছি। এরপরও কেন চালের দাম হঠাৎ বেড়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করতেই চালকলমালিকদের ডাকা হয়েছে। আর ভারত থেকে জরুরি পরিস্থিতিতে কোটার মাধ্যমে চাল আমদানির ব্যাপারে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর আলোচনা ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে।’
বর্তমানে ভারতে চাল ও গম রপ্তানিতে নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত থেকে আমদানি কোটার সুবিধা নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশও একই সুবিধা নিতে চাইছে। খাদ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৪ লাখ টনের বেশি চাল এবং ২ লাখ টনের বেশি গম মজুত আছে। ধান মজুত আছে ১৬ হাজার টনের বেশি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ১৬ লাখ টনের বেশি ধান, চাল ও গম মজুত আছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোটা–সুবিধায় সরকারি পর্যায়ে ৮ লাখ টন ও বেসরকারি পর্যায়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানির জন্য ভারতের কাছে চাহিদার কথা জানানো হয়েছে। আর গমের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে ৭ লাখ টন ও বেসরকারিভাবে আমদানির জন্য ২০ লাখ টনের চাহিদার কথা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে আমদানির ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিয়ে সম্প্রতি আলোচনা শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর আমরা ভারতের কাছ থেকে কোটার মাধ্যমে চাল, গমসহ কয়েকটি পণ্য আমদানির ব্যাপারে আলোচনা করেছি। এ ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া ভারতের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনের পর এ ব্যাপারে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে দুই দেশের পক্ষ থেকে দ্রুত অগ্রগতির আশা করছি।’