নরীস্বাস্থ্য মানে শুধু মাতৃস্বাস্থ্য নয়। অসংক্রামক ব্যাধি বৈশ্বিকভাবে নারীকে ব্যাপক বৈষম্যের মুখে দাঁড় করিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা এ বৈষম্য দূর করতে পারে।
জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবারের একটি অধিবেশনে নারীস্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে এ কথাগুলো উঠে আসে। এ সময় বৈশ্বিকভাবে স্বাস্থ্য খাতে নারী কোন কোন সমস্যার মুখে পড়ছে, কিছু ক্ষেত্রে কোনো কোনো দেশ কীভাবে বৈষম্য কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
তিন দিনের এই সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তা হিসেবে আছেন সাড়ে তিন শ বিজ্ঞানী, গবেষক ও প্রতিষ্ঠানপ্রধান। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিলিয়নিয়ার মানবহিতৈষী বিল গেটস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস, সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ।
‘এখন সময় নারীস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার’ শীর্ষক অধিবেশনের শুরুতে জাপানের ডাইসি স্যাঙ্কিওর নির্বাহী চেয়ারম্যান সুনাও মানাবে বলেন, ক্যানসারসহ নানা ধরনের অসংক্রামক রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসায় নারীর প্রতি বৈষম্য হচ্ছে। বৈষম্য কমাতে জাপানে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে দ্রুত রোগ শনাক্ত, ডেটা বিশ্লেষণ, সামাজিক সহায়তা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও গবেষণা।
সুনাও মানাবে বলেন, বিশ্বমানের নারী গবেষকদের কাজে লাগানো হচ্ছে। তাঁদের গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
অধিবেশনে সুইডেনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ইউরোপিয়ান ক্যানসার মিশন বোর্ডের সদস্য পেনিলা গুন্টার বলেন, পরিসংখ্যান বা ডেটা নারীর প্রতি বৈষম্য বোঝার জন্য যথেষ্ট নয়। পরিসংখ্যানের বাইরে থাকা নারীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা গল্প সমান গুরুত্বপূর্ণ।
পেনিলা গুন্টার আরও বলেন, ক্যানসার বা অন্য কোনো রোগে ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নারীর ক্ষেত্রে কী হয়, তা নিয়ে আলোচনা কম হয়। সেখানে নজর কম।
পর্তুগালের এবিসি গ্লোবাল অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট ফাতিমা কারডোসো বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্য কমাতে আলোচনা বেড়েছে। বাস্তবে অসংক্রামক রোগ–বৈষম্য বেড়েছে। স্তন ক্যানসার হলে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে। পুরুষের প্রোস্টেট ক্যানসারের সময় তা হচ্ছে না। নারীর প্রতি ইতিবাচক বৈষম্য (পজিটিভ ডিসক্রিমিশন) আজ শুরু করলে ৩০০ বছর পর নারী-পুরুষে সমতা আসবে।
প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনের সহকারী পরিচালক রোনডা শেলি-থমাস বলেন, আজকাল কিশোরী স্বাস্থ্যের আলোচনায় প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার কথা ওঠে। কিন্তু মেনোপজের কথা জোর দিয়ে বলা হয় না।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বে এগিয়ে। হৃদরোগ প্রতিরোধে এগিয়ে কোস্টারিকা। এসব দেশের অভিজ্ঞতা জানা দরকার।
নারীর স্বাস্থ্য ও বৈষম্য নিয়ে অধিবেশন সঞ্চালনা করেন জার্মানির ডয়চে ভেলে টিভির সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মেলিন্ডা ক্রেন।
অধিবেশনের নির্ধারিত আলোচক ডাইসি সানকোর ইউরোপের ক্যানসার শাখার প্রধান মার্কুস কোস্ক বলেন, নারীর ওপর অসংক্রামক রোগের প্রভাব কমাতে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা বড়। তাঁদের প্রতিশ্রুতি জরুরি।