একটি বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার সংগ্রামে তিনি সারা জীবন ব্যয় করেছেন

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্মরণসভায় বক্তারাছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ একটি বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার সংগ্রামে তাঁর পুরো জীবন ব্যয় করেছেন। মোহাম্মদ ফরহাদের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার পুরানা পল্টনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্মরণসভায় বক্তারা এভাবে তাঁর মূল্যায়ন করেন। সিপিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সভায় বক্তারা বলেছেন, মোহাম্মদ ফরহাদ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি আমলের স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম, মহান ভাষা আন্দোলন, আটান্নর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি এবং তাঁর দল সিপিবির অবদান বৈষম্যমুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছে। নিষিদ্ধ থাকা কমিউনিস্ট পার্টিকে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মাঝে তুলে ধরতে পার্টি সিদ্ধান্তকে শিরোধার্য করে তিনি নিরলস কাজ করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয়ী বাংলাদেশে আমৃত্যু তিনি গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ তথা সমাজতন্ত্রের সংগ্রামকে অগ্রসর করে নিয়ে গেছেন।

বক্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘কমিউনিস্ট পার্টি ও মোহাম্মদ ফরহাদের কর্মকাণ্ড এ দেশের তরুণ প্রজন্মসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে। দেশের বিভিন্ন সংকটে স্বৈরাচারবিরোধী গণতন্ত্রের সংগ্রামে তাঁর অবদান জাতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। এ বছর আমরা এমন একটি পরিবেশে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলিত হয়েছি যে অসংখ্য মানুষের রক্তদানের মধ্য দিয়ে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত করতে হয়েছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে সাধারণ মানুষের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা হলো, সব মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি–লুটপাট বন্ধ, সবার কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা, সব কালাকানুন বাতিল ও বৈষম্যমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। এই আন্দোলনের শক্তি ভারসাম্যের কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি অনেক কিছুতে ভর করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই সংগ্রামের অন্যতম লক্ষ্য হলো এক স্বৈরাচারীর বদলে আরেক স্বৈরাচার যেন প্রতিষ্ঠা না হয়। আমাদের পার্টি দীর্ঘদিন ধরে যে সংগ্রাম করছে তার অন্যতম স্লোগান হলো, দুঃশাসন হটাও ব্যবস্থা বদলাও এবং এ জন্য নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলো। এই গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়ের ওপরে দাঁড়িয়ে এই সংগ্রাম অগ্রসর করে দেশকে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামকে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে।’

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর বিভিন্ন সময় যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলেও সভায় বক্তারা মন্তব্য করেছেন। তাঁরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করা হয়েছে স্বৈরাচারী ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে। আবার অনেকে সুযোগ বুঝে মুক্তিযুদ্ধকে পরিত্যাগ করতে নতুন নতুন বক্তব্য হাজির করছে। এই অবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে নীতিনিষ্ঠ পার্টি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এটা মনে রাখা দরকার যে দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বের বিভিন্ন অপশক্তি সব সময় তাদের স্বার্থ পূরণ করতে চাইবে। এসব বিষয়ে সতর্ক থেকে সচেতনভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

সিপিবির নেতারা নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথাযথ অগ্রগতি না হওয়ায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এসব বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। জনজীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনা ছাড়া সংস্কারের কার্যক্রম এগোনো যাবে না। নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে চলমান সংস্কার কার্যক্রম ও নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কারের কাজ এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানান।

সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), মিহির ঘোষ, মাহবুবুর আলম, সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাজেদুল হক রুবেল, হাসান তারিক চৌধুরী, বিমল মজুমদার, মোতালেব হোসেন, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, ছাত্রনেতা মাহির শাহরিয়ার রেজা প্রমুখ।

এ ছাড়া সকালে ঢাকায় বনানী কবরস্থানে প্রয়াত মোহাম্মদ ফরহাদের কবরস্থানে সিপিবিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও পরিবারের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মোহাম্মদ ফরহাদের জন্মস্থান পঞ্চগড়ের বোদাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় স্মরণসভা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।