গ্রামীণফোনের সিম বিক্রি বন্ধ কেন, যা জানাল বিটিআরসি
চার মাসের বেশি সময় ধরে দেশের শীর্ষ মুঠোফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে তাদের পুরোনো সিম বিক্রির অনুমতি দিলেও আজ সেটাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। গ্রামীণফোনের ওপর কেন এই নিষেধাজ্ঞা, সে ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বিশেষ কারণের কথা জানিয়েছে।
আজ রোববার বিটিআরসির কার্যালয়ে মুঠোফোন অপারেটরদের সেবার মান পরিমাপের জন্য নতুন ও অত্যাধুনিক ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস বেঞ্চমার্কিং সিস্টেম’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিটিআরসি কর্মকর্তারা এক প্রশ্নের জবাবে গ্রামীণফোন বিষয়ে সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ তুলে ধরেন।
গ্রামীণফোনের সিম বিক্রি নিয়ে বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কোনো টানাপোড়েন চলছে কি না, তা জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, মন্ত্রণালয় সিম বিক্রিতে একটা নির্দেশনা দিয়েছে। এই সিম বিক্রির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়ার কোনো বিধান নেই।
বিশেষ কারণে মন্ত্রাণলয় থেকে একটা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণটি হচ্ছে, যেদিন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয় ,সেদিন সেখানে নেটওয়ার্ক ভালো ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সেটা প্রত্যক্ষ করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আমাদের সচিবকে ফোন করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এর আগেও প্রচুর অভিযোগ ছিল এবং এখনো আছে। সেবার মান খারাপ। এ ছাড়া আদালতে রিটও ছিল। এগুলো বিবেচনায় মন্ত্রী গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রি বন্ধের জন্য বলেছিলেন। এরপর সেনাবাহিনী, পুলিশের কাছ থেকে চাহিদা আসে, তারা সিম চায়। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আছে, নতুন সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু আমি তো নতুন সিম বিক্রির অনুমতি দিইনি। পুরোনো সিম দিয়েছি, রিসাইকেল করার জন্য। এই পুরোনো সিম প্রায় ১৩ লাখ তাদের কাছেই ছিল।’
বিটিআরসি চেয়্যারমান জানান, নিষেধাজ্ঞার পর গ্রামীণফোনের ৩৪ লাখ গ্রাহক কমেছে। তবে বাজারে তাদের চাহিদা আছে। গত সেপ্টেম্বরে বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে পুরোনো সিম বিক্রির যে অনুমতি দিয়েছিল, সেটা আজ আবার প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিটিআরসির সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশন খাইরুল বাশার বলেছেন, ‘গ্রাহকদের পক্ষ থেকে, গ্রামীণফোন এই সিদ্ধান্তে গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা বিশ্বাস করি যে, এটি দেশের ডিজিটালাইজেশন এজেন্ডার জন্য এবং গ্রাহকদের স্বাধীনতার পরিপন্থি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার মুঠোফোন অপারেটরদের প্রতি গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, মোবাইল ডেটার রেট এখনো ঠিক করা হয়নি। অপারেটররা ইচ্ছেমতো প্যাকেজ দেবে, তা হতে পারে না। একটা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় থাকা উচিত। বর্তমান যে ডেটা রেট আছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
মোবাইল ডেটার প্যাকেজ রেট ঠিক করে দিতে বিটিআরসির কাছে আবারও অনুরোধ জানান মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি আরও বলেন, কোনো অপারেটরেরই গ্রাহক সেবা সন্তোষজনক নয়। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী অপারেটরগুলো সেবা দিতে পারে না। ২০১৮ সালে এবং পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে যে স্পেকট্রাম দেওয়া হয়, তা এখনো রোল আউট করা হয়নি। তাহলে গ্রাহক সন্তুষ্টি কোত্থেকে আসবে, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
কোয়ালিটি অব সার্ভিস বেঞ্চমার্কিং সিস্টেম সম্পর্কে উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবীর। সেখানে তিনি জানান, নতুন যন্ত্রপাতিতে একসঙ্গে চার স্থানে সেবার মান পরিবীক্ষণ করা যাবে, একই সঙ্গে সব মোবাইল অপারেটরের বিভিন্ন প্রযুক্তির ভয়েস, থ্রিজি ডেটা, ফোর–জি ডেটা, ওটিটি সেবাসমূহ, নেটওয়ার্ক কাভারেজ পরিবীক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। এ ছাড়া ফাইভ–জি প্রযুক্তির সেবার মান যাচাই করতেও পারবে তারা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান ও বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।