টাকা ছিনিয়ে নিতেই প্লাস্টিক ব্যবসায়ীকে মেঘনা নদীতে ফেলে হত্যা
পুরান ঢাকার প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জুয়েল সিকদার ও তার কর্মচারী মোরশেদ আলমকে লাভে বেশি পরিমাণ প্লাস্টিক কাঁচামাল দেওয়ার কথা বলে বরিশাল ডেকে এনেছিলেন তার পূর্ব পরিচিত দেলোয়ার হোসেন মোল্লা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, জুয়েলের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে ও তাঁর কর্মচারী মোরশেদ আলমকে শ্বাসরোধ করে মেঘনা নদীর মাঝে নৌকা থেকে ফেলে দেন দেলোয়ার (৩৫) ও তার সহযোগীরা।
২০ ডিসেম্বর ভোলার চরফ্যাশন নদী থেকে মোরশেদের, দুদিন পর ২২ ডিসেম্বর ভোলার ইলিশা নদী থেকে জুয়েলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গতকাল বুধবার রাতে দেলোয়ার ও তার তিন সহযোগীকে ঢাকা বরিশালে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ছয়টি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন—নুরুজ্জামান হাওলাদার (৪০), মো. আজিজ শিকদার (৩৪) ও হাফেজ চৌকিদার (৪৬)।
পুলিশ বলেছে, দেলোয়ার ও তার সহযোগীরা প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জুয়েল ও তার কর্মচারীকে অপহরণের পর টাকা ছিনিয়ে নিয়ে বরিশালে মেঘনা নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে ডিএমপি সদর দপ্তরের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ব্যবসায়ী জুয়েলের মরদেহ শনাক্তের পর তদন্তে নেমে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানা এলাকা থেকে দেলোয়ার হোসেন মোল্লা ওরফে দেলু, তার সহযোগী নুরুজ্জামান হাওলাদার (৪০), মো. আজিজ শিকদার (৩৪) ও হাফেজ চৌকিদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জুয়েল ও তার কর্মচারী মোরশেদকে অপহরণ-হত্যার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জুয়েল শিকদারের বাবা চকবাজার থানায় ছেলের নিখোঁজ থাকার ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করেন। জুয়েল প্লাস্টিকের পুরোনো বোতল কিনে রি-সাইক্লিং করে বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য বানানোর কাজ করতেন। তার সঙ্গে নিখোঁজ ছিলেন তার কর্মচারী মোরশেদ আলম। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় তাদের দুজনের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর জুয়েলের বাবা থানায় অপহরণের মামলা করেন। চকবাজার মডেল থানা-পুলিশ ওই ঘটনা তদন্ত করে আসছিল।
পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পরস্পরের যোগসাজশে জুয়েল ও তার কর্মচারী মোরশেদ আলমকে অপহরণ করে বরিশাল জেলার মেহেদীগঞ্জ উপজেলায় নিয়ে যায়। সেখানে ইঞ্জিনচালিত মাছ ধরার ট্রলারে তুলে মেঘনা নদীর মাঝে নিয়ে চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে তাদের কাছে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারা ওই দুজনের গলা চেপে ধরে, একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে গেলে মেঘনা নদীতে ফেলে দিয়ে চলে যান তারা। জুয়েলের পূর্ব পরিচিত ছিলেন গ্রেপ্তার দেলোয়ার।
তিনি বলেন, দেলোয়ার প্লাস্টিকের ব্যবসায় জড়িত নন, তবে তিনি কৌশলে ব্যবসায়ীদের ডেকে নিয়ে টাকা লুটপাট করে নদীতে ফেলে দিতেন। এ ঘটনায় দেলোয়ার আকন নামে আরেকজন পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তার পুলিশের অভিযান চলছে।