রোজা প্রায় শেষ। ঈদের কেনাকাটার পর্বও শেষের দিকে। নতুন পোশাক কেনার পর ক্রেতারা এখন ভিড় জমাচ্ছেন টুপি, আতর আর জায়নামাজের দোকানে। ঈদগাহে যেতে নতুন জায়নামাজ কিংবা পাঞ্জাবিতে পছন্দের সুবাস দিতে আতরের রয়েছে বাড়তি কদর।
রোববার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-সংলগ্ন রাজধানীর আতর-টুপির প্রধান মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। এখানকার আতর-টুপির ব্যবসায়ীরা জানান, বেচাকেনা বরাবরের মতোই। তবে দু-একজন ব্যবসায়ীর মতে, গতবারের তুলনায় ব্যবসা কিছুটা মন্দা।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটে নানা নামের ও দামের টুপি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে আছে ব্রুনেই টুপি, রুমি টুপি, ওমানি টুপি, সৌদি টুপি, পাগড়ি টুপি, আফগান টুপি, ইন্দোনেশিয়ান টুপি, পাকিস্তানি সিন্দি টুপি, মিসরীয় টুপি। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে জরির কাজ করা তুর্কি টুপি।
হাজী স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ৫০ টাকা থেকে টুপির দাম শুরু। সাড়ে ৩ হাজার টাকা দামের টুপি রয়েছে তাঁর দোকানে। অধিকাংশ ক্রেতা ১০০ থেকে ৫০০ টাকা দামের মধ্যে টুপি খুঁজছেন। এসব টুপি ভারত, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে বেশি আসে। দেশি টুপিও আছে, দাম কিছুটা কম।
পবিত্র লাইলাতুল কদর পেরিয়ে গেছে। ঈদের ছুটিতে অনেকে বাড়ি চলে গেছেন। রাজধানী বা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাঁরা বাড়িতে যাবেন, এখন চলছে তাঁদের জিনিসপত্র গোছানোর পালা। এমন অনেকেই আসছেন বায়তুল মোকাররম সুপার মার্কেটের টুপি-আতর কিনতে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মোতাহার হোসেন টুপি দেখছিলেন। তিনি বললেন, ঈদের কেনাকাটা করা প্রায় শেষ। টুপি কেনা বাকি ছিল। ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে বেশ সুন্দর টুপি পাওয়া গেছে।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটের যে আতরের দোকানগুলো রয়েছে, সেগুলোতে মিলিলিটার হিসেবে আতর বিক্রি হয়। অধিকাংশ দোকানে ৩ মিলির ছোট বোতলে ভরে আতর বিক্রি হচ্ছে। দেশি ছাড়াও ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আনা আতর রয়েছে এখানে।
ইসলামিয়া আতর হাউসের হাফিজুর রহমান বলেন, রোজার শুরু থেকেই আতরের বিক্রি ভালো। উদ, আল হারমাইন, কস্তুরি, মুস্তাহ আল তাহারা, আল আরাবিয়া, গুপি, সুলতান, কিং হোয়াইট, জান্নাতুল নাঈম, আল-ফারেজ ও হাজরে আসওয়াদের মতো দামি আতর রয়েছে। ভালো মানের আতরের দাম প্রতি মিলিলিটার ৬০০ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত।
তবে আতরের দোকানগুলোয় বেশি বিক্রি হচ্ছে আলিফ, আল ফারহান, আল ইসরাত, আল রিসাব, জান্নাতুল ফেরদাউস, রজনীগন্ধা, বকুল, সুরভি ও বেলি ফুলের আতর। এসব আতরের দাম ৭৫ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। আঁতর সংরক্ষণের বোতল বা দানিও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। কাচ, ধাতুসহ নানা পাথরের এসব দানির দাম পড়বে ২০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
কয়েকটা দোকান ঘুরে আতর কেনেন স্কুলশিক্ষক এনামুল হক। তিনি বলেন, বাড়ি গিয়ে সবাইকে নিয়ে ঈদের নামাজ পরতে ঈদগাহে যাওয়া হয়। নতুন পাঞ্জাবির সঙ্গে আঁতর দিতে ভালো লাগে। তাই সচরাচর এই সময়েই আঁতর কিনি।
ঈদের আগের শেষ দিনগুলোতে জায়নামাজের বিক্রিও বেশ বেড়েছে। অধিকাংশ জায়নামাজ তুরস্কের তৈরি। পাকিস্তান, ভারত, চীন বা সৌদি আরবের তৈরি কিছু জায়নামাজও পাওয়া যাচ্ছে। জায়নামাজের বুনন, কোমলতা ও নকশার ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে।
জেদ্দাহ আতর, টুপি ও জায়নামাজ হাউসের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন বলেন, বিদেশি জায়নামাজ ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের আছে। বাংলাদেশে তৈরি পাতলা কাপড়ের জায়নামাজ আছে, দাম ১২০ থেকে দেড় শ টাকা। তবে বিদেশি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দামের জায়নামাজ বেশি বিক্রি হচ্ছে।
বিভিন্ন ধরনের পাথরের তৈরি তসবি ছাড়াও চন্দন কাঠ, প্লাস্টিক ও জয়তুন কাঠ দিয়ে বানানো তসবিও বিক্রি হচ্ছে। প্রকারভেদে দাম পড়বে ১০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
মার্কেটের ভেতরের দোকানগুলো ছাড়াও বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট, দক্ষিণের গেট-সংলগ্ন ফুটপাতের দোকানগুলোতেও আতর-টুপির বিক্রিবাট্টা বেশ জমে উঠেছে। এসব দোকানে টুপির দাম ২০ টাকা থেকে শুরু। আতর মিলছে ১০০ টাকার কমে।