স্বাস্থ্যের ডিজি অধিদপ্তরে ঢুকতে পারছেন না

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরছবি: ওয়েবসাইট থেকে

বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতা–কর্মীদের বাধার মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন অফিসে ঢুকতে পারছেন না। ড্যাব নতুন নিয়োগ পাওয়া মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুর জাহান বেগম প্রথম আলোকে বলেছেন, অনিয়মের অভিযোগ তিনি খতিয়ে দেখবেন।

১৯ আগস্ট অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে মহাপরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে অধ্যাপক রোবেদ আমিনকে ওই পদে (চলতি দায়িত্বে) পদায়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেদিন থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে ড্যাব। তারা মিছিল, সমাবেশ করেছে। নিয়োগ পাওয়ার পর রোবেদ আমিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ঢুকতে পারেননি, নিজের আসনে বসতে পারেননি।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ ও আরও কয়েকজন ড্যাবের নেতা মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুর জাহান বেগমের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা প্রায় ৪০ মিনিট উপদেষ্টার কক্ষে ছিলেন। এই সময় তাঁরা রোবেদ আমিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন।

এসব অভিযোগের মধ্যে আছে সরকারি কর্মচারী হয়েও রোবেদ আমিন একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিকানার অংশীদার, এটি বিধিবিহির্ভূত। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অডিট আপত্তি আছে। আছে নিজের পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে গবেষণা করানোর অভিযোগ।

একটি অভিযোগ আছে, রোবেদ আমিন বেশ কয়েক বছর ধরে অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর। কিন্তু তিনি নিজের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে নোয়াখালীর আব্দুল মালেক মেডিকেল কলেজে কম্পিউটার ও আসবাব কেনার জন্য ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭৬ টাকা দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যুগ্ম সচিব আজ প্রথম আলোকে বলেন, অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা কম্পিউটার বা আসবাব কেনার জন্য ব্যয় করা ঠিক হয়নি।

রোবেদ আমিনের বক্তব্য

রোবেদ আমিন বলেছেন, বেসরকারি এ এম জেড হাসপাতালের তিনি একজন মালিক। তবে বর্তমানে ওই হাসপাতালের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। তিনি দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণা করার জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন, এখানে নিজের পছন্দের মতো মানুষকে দিয়ে গবেষণা করানোর অভিযোগ ঠিক না। তৃতীয়ত, অডিট একটি চলমান প্রক্রিয়া। অডিট আপত্তি উঠলেই সেখানে যে দুর্নীতি হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো আর্থিক দুর্নীতি করিনি।’

পাঁচ–ছয় দিন ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই কাজ করতে পারছেন না। অনেকে হেনস্তা হওয়ার ভয়ে অফিসে যাচ্ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অফিসে না থাকায় অনেক কাজ আটকে গেছে। এর প্রভাব চিকিৎসার ক্ষেত্রে পড়ার ঝুঁকি আছে।

আজ সকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুর জাহান বেগম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ উঠলেই তার ভিত্তিতে মহাপরিচালককে সরিয়ে দেওয়া হবে, বিষয়টি এমন নয়। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হবে।

আরও বদলি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীরকে জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনাকে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক করা হয়েছে। আর নিপসমের পরিচালক মো. শফিউল ইসলামকে ওএসডি করা হয়েছে। শ্যামলীর ২৫০ শয্যার যক্ষ্মা হাসপাতালের উপপরিচালক করা হয়েছে ডা. আয়শা আক্তারকে।