কক্সবাজার সৈকতের গুপ্ত খাল ঝুঁকি বাড়াচ্ছে পর্যটকদের
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এখন পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের দিন পর্যন্ত দুর্গাপূজার চার দিনের ছুটিতে সৈকতে অন্তত ছয় লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। অধিকাংশ পর্যটক একবারের জন্য হলেও সমুদ্রে নামেন। কিন্তু সৈকতের একাধিক স্থানে গুপ্ত খাল ও গর্তের কারণে পর্যটকদের জন্য সাগরে নামা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানিও।
পর্যটকদের সতর্ক করে গুপ্ত খাল এলাকায় ওড়ানো হয় লাল নিশানা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি-সেফ লাইফগার্ডের কর্মীরা সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সৈকতে প্রচারণা চালান। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। পর্যটকেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে নামছেন।
সি-সেফ লাইফগার্ডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সৈকতের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। এ কারণে একাধিক গুপ্ত খাল ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের সময় এসব খালও গর্ত ঢেকে যায়। ফলে গুপ্ত খালের অবস্থান বুঝতে পারেন না পর্যটকেরা। আর এতেই গুপ্ত খালে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। সৈকতে এসে কেউ গর্তে আটকা পড়লে উদ্ধারের জন্য ডুবুরিও নেই।
সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে পাঁচটির বেশি গুপ্ত খাল এবং বেশ কয়েকটি বড় আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সি-সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, জোয়ারের সময় এসব খাল বা গর্ত পানির নিচে ডুবে থাকে। অধিকাংশ পর্যটক জোয়ারের সময় সমুদ্রে গোসলে নামেন। তখন কোমরসমান পানিতে নেমে গোসল ও খেলাধুলা করার সময় গুপ্ত খাল বা গর্তে আটকা পড়েন। লাইফগার্ড কর্মীরা মাইকে প্রচারণা চালিয়ে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। লাল নিশানা যেখানে আছে, সেখানে গোসলে নামতে নিষেধ করেন। কিন্তু অনেকে তা মানছেন না। ভাটার সময় জোয়ারের পানি যখন নেমে যায়, তখন বেশ কিছু গুপ্ত খাল দৃশ্যমান হয়।
সাগরে নেমে পর্যটকেরা প্রায়ই দুর্ঘটনা শিকার হচ্ছেন। সি-সেফ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, স্রোতের টানে ভেসে যাওয়ার সময় গত কয়েক দিনে অন্তত ১৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে মারা গেছেন পাঁচ পর্যটক। গত ৬ বছরে স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন ৪৯ পর্যটক। ৬ বছরে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়ার সময় উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচানো হয় অন্তত ৭০০ জনকে।
সর্বশেষ ৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ হয় স্কুলছাত্র মো. আসমাইন (১৩)। চার ঘণ্টা পর তার মরদেহ ভেসে ওঠে ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে সমিতিপাড়া সৈকতে।
১২০ কিলোমিটার সৈকতের কোথাও পর্যটকের নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা নেই বলে মন্তব্য করেন পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা। তিনি বলেন, সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে গোসলে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সি-সেফ লাইফগার্ডের মাত্র ২৭ জন কর্মী থাকলেও একজন ডুবুরিও নেই। অথচ পর্যটন ঘিরে কক্সবাজারে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে হচ্ছে। কিন্তু গত চার দশকেও সৈকতের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা নেট দিয়ে ঘিরে পর্যটকদের নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।