হেফাজতের প্রয়াত আমিরের ছেলে আনাস মাদানীসহ ২০০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা

আনাস মাদানী, এম এ সালামফাইল ছবি

সাড়ে তিন বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গুলিতে এক মাদ্রাসাশিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা  এম এ সালাম, চট্টগ্রাম জেলার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রশিদুল হক, হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীসহ ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নিহত ছাত্র কাজী মিরাজুল ইসলামের বাবা কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবালের আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত হাটহাজারী থানার ওসিকে মামলা হিসেবে নিতে নির্দেশ দেন। বাদীর আইনজীবী তাওহীদুল ইসলাম প্রথম আলাকে বলেন, মামলায় ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন হাটহাজারী সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম, হাটহাজারী থানার সাবেক ওসি রফিকুল ইসলাম, পরিদর্শক রাজীব শর্মা, কেশব চক্রবর্তী, তৌহিদুল করিম (বর্তমানে নগরের চকবাজার থানার পরিদর্শক)  ও আমির হোসেন, সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মুকিব হাসান, কবির হোসেন ও জসীমউদ্দীন, পিবিআইয়ের এসআই শাহাদাত হোসেন।

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাশেদুল আলম ও ইউনুস গণি চৌধুরী, হাটহাজারী পৌরসভার সাবেক প্রশাসক মনজুরুল আলম চৌধুরী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাসির হায়দারকেও আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মইনুদ্দিন রুহি ও হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমেদ শফির ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীকে আসামি করা হয়েছে। আনাস মাদানী হেফাজতের একাংশের নেতা। তৎকালীন আওয়ামী সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর আগমনের প্রতিবাদে সেদিন দুপুরে হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে মিছিল বের করেছিলেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। সেখানে গুলিতে মাদ্রাসার চার শিক্ষার্থী নিহত হন। পরে হাটহাজারী থানা, ভূমি অফিস ও সরকারি ডাকবাংলোয় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা হয়। এসব মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলাগুলো এখনো তদন্তাধীন।

সাড়ে তিন বছর আগের ঘটনায় নিহত এক মাদ্রাসাশিক্ষার্থীর বাবার করা মামলার এজাহারে বলা হয়, সেদিন মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে। গুলির ঘটনায় আসামিরা জড়িত।

উল্লেখ্য, এর আগে একই ঘটনায় মাদ্রাসার ছাত্র রফিকুল ইসলাম নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বাবা আবদুল জব্বার বাদী হয়ে গত শুক্রবার হাটহাজারী থানায় মামলা করেছিলেন। এতে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, চট্টগ্রাম জেলার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রশিদুল হক, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা, হেফাজতে ইসলামের সাবেক নেতাসহ ২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।