পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণ, সমাবেশস্থলে থাকবে সিসি ক্যামেরা–ওপরে উড়বে ড্রোন
রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। সমাবেশকে নজরদারির মধ্যে রাখতে পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখা হবে। পাশাপাশি নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হবে ড্রোন। সমাবেশ ঘিরে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি ২৮ অক্টোবর (শনিবার) এই মহাসমাবেশ করবে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচি পালন করতে চায় দলটি। এর পাল্টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে কয়েক দিন ধরে আলোচনা রয়েছে। বৃহস্পতিবারও ডিএমপির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, রাস্তায় সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে বিকল্প জায়গা দেখতে বলা হয়েছে।
তবে ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, দুই দলের সমাবেশের স্থান নিয়ে বৃহস্পতিবার কয়েক দফা বৈঠক করেছেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে বিকেলে ডিএমপি কমিশনারের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ ও বিএনপি মহাসমাবেশের জন্য যে স্থান চেয়ে আবেদন করেছে, সেখানে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা মাথায় রেখেই ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নিতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। তবে যেকোনো সময় পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। তাই সব ধরনের প্রস্তুতি রাখছে পুলিশ। ওই দিন ডিএমপির সব পুলিশ সদস্য মাঠে থাকবে। সমাবেশস্থলে সিসি ক্যামেরা, ড্রোন, গোয়েন্দারা সাদাপোশাকে মাঠে থাকবেন। ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে থাকবে তল্লাশিচৌকি।
বিএনপির মহাসমাবেশ সামনে রেখে এরই মধ্যে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। ঢাকার পাড়া-মহল্লার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতেও তল্লাশি চলছে। আবাসিক হোটেল, মেস ও বাসাবাড়িতেও চলছে পুলিশের তল্লাশি অভিযান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) খ. মহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে বড় ধরনের কোনো হুমকি নেই। তবে বড় ধরনের সমাবেশ ঘিরে যেকোনো গোষ্ঠী নাশকতা, দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এসব বিষয় পুলিশকে মাথায় রাখতে হয়। এ জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’ তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেসব জায়গায় সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে, সেখানেই দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে শুক্রবার সিদ্ধান্ত দেওয়া হতে পারে।
পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণ
শনিবারের সমাবেশ ঘিরে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হলে তা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সে বিষয়ে সপ্তাহ ধরে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কয়েক ধাপে ঢাকার ৫০ থানার ওসিসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ঢাকার পূর্বাচল এলাকায় এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সদস্যদের দুই দলে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। হাতে–কলমে প্রশিক্ষণ দিতে পুলিশের মধ্য থেকে এক দলকে দিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা তৈরি করা হয়েছে। আরেকটি দলকে দিয়ে সেই দাঙ্গা-হাঙ্গামা দমন করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা হলে কীভাবে সাউন্ড গ্রেনেড, প্রাণঘাতী নয় এমন বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করবেন, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সারদায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা দমনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেগুলো ঝালিয়ে নিতেই এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে, সেটা পেশাদারত্বের সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।