‘উপোস থাকতাম, এখন কলা–বন পেয়ে খুশি’

মহানগর হাজতখানায় আজ ১১০ আসামিকে দুপুরের খাবার হিসেবে ১টি করে কলা ও ২টি করে বানরুটি দেওয়া হয়। সঙ্গে পানিও
ছবি: গাজী ফিরোজ

এক মাস আগেও চট্টগ্রাম আদালতের মহানগর হাজতখানায় গ্রেপ্তার হয়ে এসেছিলেন নগরের কোতোয়ালির বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। সেদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে কোনো স্বজন হাজতখানায় আসেননি। পকেটে ছিল না কোনো টাকা। উপোস অবস্থায় কারাগারে যান তিনি। কিন্তু আজ সোমবার কারাগার থেকে হাজতখানায় এসে দুপুরে একটি কলা ও দুটি বানরুটি পেয়ে খুশি সাইফুল। পুলিশের উপস্থিতিতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপোস থাকতাম, এখন কলা–বন পেয়ে খুশি।’

শুধু সাইফুল নন, আজ মহানগর হাজতখানায় ১১০ আসামিকে দুপুরে খেতে ১টি করে কলা ও ২টি করে বানরুটি দেওয়া হয়। সঙ্গে পানিও।

থানা ও আদালতের হাজতখানার আসামিদের জন্য দৈনিক দুই বেলার খাবার বাবদ বরাদ্দ বর্তমানে ১৫০ টাকা। কিন্তু গত আড়াই বছরে আসামিদের দুপুরের খাবার না দিয়েও সরকারি কোষাগার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। উল্টো পুলিশকে টাকা দিয়ে খাবার খেতে হতো আসামিদের। যাঁদের স্বজনেরা হাজতখানায় আসেন না কিংবা টাকা থাকে না, তাঁদের উপোস যেতে হতো কারাগারে।

মহানগর হাজতখানার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, দুপুরে হাজতখানায় যেসব আসামি ও বন্দী ছিলেন, তাঁদের সবাইকে কলা ও বানরুটি দেওয়া হয়েছে। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা যত দিন না হচ্ছে, তত দিন দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার প্রথম আলোয় ‘আসামির খাবারের টাকা পুলিশের পকেটে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব দু-এক দিনের মধ্যে আসামিদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি খাবারের টাকার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) আরাফাতুল ইসলামও জানিয়েছিলেন, আসামিদের দুপুরের খাবারের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক করতে দু-এক দিন সময় লাগতে পারে।

আজ মহানগর হাজতখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, নগরের কোতোয়ালি থানার মাদক মামলার আসামি সোহেল রানা। তাঁর হাতে একটি প্যাকেট। এর মধ্যে রয়েছে একটি কলা ও দুটি বানরুটি। খাবার পেয়ে চোখেমুখে তাঁর স্বস্তির ঝিলিক। সোহেলের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে। পুলিশকে দিয়ে কোনো খাবার কেনার মতো টাকা তাঁর পকেটে নেই। তাই তাঁর খুশিটা একটু বেশি। তাঁর পাশে দাঁড়ানো জাহাঙ্গীর আলম, রায়হান মুজিব, শাহ আলম, মো. রফিক ও আহসান হাবিবও খুশি শুকনা খাবার পেয়ে।