বিদ্যুৎ খাতের ‘সব অসম চুক্তি’ পুনর্বিবেচনার আহ্বান সুজনের
ভারতের আদানি গোষ্ঠীসহ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে যেসব ‘অসম চুক্তি’ হয়েছে, সেগুলো পুনরায় বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। মঙ্গলবার সংগঠনটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে একের পর এক অবিবেচনাপ্রসূত ও জনস্বার্থপরিপন্থি সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে, যা এই খাতকে ক্রমশ গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সম্প্রতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভারতের বিতর্কিত আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার অসম, অস্বচ্ছ ও বৈষম্যমূলক চুক্তির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ওই চুক্তিতে বর্তমান বাজারদর থেকে কয়েক গুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার কথা বলা হয়েছে, যা দেশের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে।
গত ২৯ জানুয়ারি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সরাসরি বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা সরকারের হাতে দিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন), বিল পাস হয়। সুজন বলছে, এই আইনে গণশুনানির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের অংশগ্রহণের অধিকার খর্ব করা হয়েছে।
সংগঠনটি বলেছে, বিদ্যুৎ খাতের এসব ঘটনার মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) মার্কিন ডলারের চলতি বিনিময় হারে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে নতুন চুক্তি করছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত এক বছরে ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পিডিবিকে ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে নতুন করে ডলারে চুক্তি বিদ্যুৎ খাতকে আরও সংকটে ফেলবে উল্লেখ করে সুজন বলেছে, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেই বাড়তি এই ব্যয় মেটানো হবে, যা জনগণের জীবনযাত্রাকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। ডলারে চুক্তির এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে যে ক্ষেত্রে একান্তই ডলার ছাড়া মুদ্রাবিনিময় সম্ভব নয়, সেগুলো বাদে অন্যান্য বিনিময় দেশীয় মুদ্রায় করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সুজন।
আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি স্পষ্টতই জনস্বার্থবিরোধী মন্তব্য করে সংগঠনটি বলেছে, আদানির বিদ্যুৎ কিনতে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি দাম দিতে হবে। গুনতে হবে কয়লা সরবরাহকারী, পরিবহনকারী ও বন্দর অপারেটরদের জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ। আরও আছে ক্যাপাসিটি চার্জ, যা চুক্তিতে স্বেচ্ছাচারী একটি সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই চুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির এই সংকট কাটাতে দেশের জনগণ, নাগরিক সমাজ, বিভিন্ন অংশীজন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জনবান্ধবনীতি প্রণয়ন এবং এর আলোকে যথাযথ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা অনেক জরুরি বলে মন্তব্য করে সুজনের পক্ষে সবাইকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।