শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকায় আরও ৬ মামলা

শেখ হাসিনাফাইল ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে আরও ছয়টি মামলা দায়েরের তথ্য জানা গেছে। এগুলোর পাঁচটিই হত্যা মামলা। অন্যটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলা।

মামলাগুলোর কাগজপত্রের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদসহ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।

এ নিয়ে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অন্তত ৪৫টি মামলা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর বেশির ভাগই হত্যা মামলা।

মোহাম্মাদপুরে গুলি করে হত্যা

মোহাম্মদপুরে শাহরিয়ার হোসেনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শাহরিয়ারের বন্ধু রবিউল খান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারা দেশে একযোগে ছাত্র–জনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করার জন্য রাজপথে শান্তিপূর্ণ মিছিল–সমাবেশ করছিলেন। এ সময় মোহাম্মদপুর ও আদাবরে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিরা দেশি–বিদেশি অস্ত্র, চাপাতি, রামদা ও সামুরাই নিয়ে জনতার ওপর আক্রমণ করেন। গত ১৯ জুলাই সকালে শাহরিয়ার হোসেন মোহাম্মদপুরের বছিলা সড়কের ময়ূর ভিলা সড়কের কাছে পৌঁছালে শাহরিয়ার গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ঢাকার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহম্মেদ ও আওয়ামী লীগ মাইনুল ইসলাম পলাশ আবারও শাহরিয়াকে গুলি করেন। তাতে শাহরিয়ারের মৃত্যু হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, মোহাম্মদপুর থানা–যুবলীগের আহবায়ক কাজী মারুফুল ইসলাম বিপ্লব, উত্তর সিটি করপেরেশনের কাউন্সিলর আসিফ আহম্মেদ, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ রাতুল, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সেন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা জামান খান, মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুল ইসলাম রাসেল, মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আইমান ওয়াহিদ, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কসাই রবিউল ইসলাম, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক ভূঁইয়া, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফাহিম সাদেক, আওয়ামী লীগ নেতা মেহেদী হাসান খান মামুন, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ইসরাফিল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমসহ ৬৮ জন।

কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা

বিমানবন্দর এলাকায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্র আবদুল্লাহ বিন জাহিদকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন আবদুল্লাহর আত্মীয় মোহাম্মদ জাকিউল্লাহ বাহার। আদালত মামলার অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলায় বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় বিমানবন্দর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিল চলার সময় কলেজছাত্র আবদুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলায় ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবীব হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মফিজ উদ্দিনসহ ৩৩ জনকে আসামি করা হয়।

  কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা

ধানমন্ডিতে কিশোর সাব্বিরকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। সাব্বিরের দাদা জয়নাল শেখ বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় বুধবার মামলা করেন। মামলায় বলা হয়েছে, গত ২০ জুলাই সাব্বির চা ও ফুল বিক্রির জন্য বাসা থেকে বের হন। পরে তিনি খবর পান, সাব্বিরের মরদেহ রয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

মামলায় বলা হয়েছে, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের উত্তর পশ্চিম পাশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অজ্ঞাতনামা নেতা–কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। এতে গুরুতর জখম হয়ে মারা যায় সাব্বির।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়।

শ্রমিককে গুলি করে হত্যা

বাড্ডা এলাকায় আবদুল জব্বারকে (৩৮) হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডা থানায় এ মামলা করেছেন জব্বারের মা নাজমা বেগম। মামলায় উল্লেখ রয়েছে, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে মেরুল বাড্ডা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়।

উত্তরায় পোশাক শ্রমিককে গুলি করে হত্যা

উত্তরায় পোশাক শ্রমিক ফজলুল করিমকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ফজলুলের ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বুধবার উত্তরা পূর্ব থানায় এ মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়েছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন ফজলুল করিম। ৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরার আজমপুর এলাকায় গুলি করে ফজলুলকে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ৩৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ছাত্রদলের সাবেক নেতাকে হত্যাচেষ্টা

ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও সাংবাদিক আমিনুল ইসলামকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে আজ বৃহস্পতিবার মামলা করেন আমিনুল ইসলামের স্ত্রী সুমি বেগম। মামলায় বলা হয়েছে, আমিনুল দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকায় কর্মরত। গত ২০ জুলাই রাতে মালিবাগ রেলগেট এলাকায় ঢাকা মহানগর যুবদল দক্ষিণের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন ও আমিনুল অবস্থান করছিলেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা এলোপাতাড়ি গুলি করে। পরে গুলি আমিনুলের বাঁ পায়ে লাগে। আমিনুলের আইনজীবী সৈয়দ নূরে আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, সাংবাদিক আমিনুল আগে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মামলায় অন্যদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।