অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও পাহাড়ি মানুষেরা আতঙ্কে দিন যাপন করছে: জেএসএস

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) বলেছে, সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। এ সময় ২০০টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনায় ৬ হাজার ৫৫ জন পাহাড়ি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় ২১ জনকে হত্যা এবং ১১৯টি বাড়ি ও দোকান অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে।

জেএসএস বলেছে, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি। উপরন্তু পার্বত্য চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম (পাহাড়ি জাতিসত্তা) স্বার্থপরিপন্থী কার্যক্রম অধিকতর জোরদার হয়েছে। পার্বত্য এলাকার পাহাড়ি জনগণ চরম অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

‘পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে’ এ তথ্য তুলে ধরে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল জেএসএস। দলটি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পাহাড়িদের পক্ষে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি করে।

জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ১১৯টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলায় জড়িত করা হয়েছে ১৪৩ জনকে, সাময়িক আটক করা হয়েছে ২৮ জনকে, জুম ও বাগান-বাগিচা চাষে বাধা ও ক্ষতি করা হয়েছে ৪২ পরিবারকে। সীমান্ত–সংযোগ সড়কে ক্ষতি করা হয়েছে ২৪২ পরিবারকে এবং পারিবারিক তথ্য ও ছবি প্রদানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ২০টি গ্রামকে।

জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে সবচেয়ে নৃশংস ও রোমহর্ষক ঘটনা হলো সেপ্টেম্বরে পাহাড়ি জনগণের ওপর নৃশংস সাম্প্রদায়িক হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ আর ডিসেম্বরে লামায় ত্রিপুরাদের ১৭টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না হতেই এই নৃশংস সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়। আগের সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর মতো এই সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের কাউকেই আইনের আওতায় আনা হয়নি এবং এসব ঘটনার যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা হয়নি।

জেএসএসের সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন পাঠান।

গণ-অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট ছিল বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার। সেই রাষ্ট্রসংস্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় পার্বত্য চুক্তিবিরোধী এবং জুম্ম স্বার্থপরিপন্থী রাষ্ট্রীয় নীতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

জেএসএস বলেছে, আগের সরকারগুলোর মতো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও পাহাড়ি জনগণের ওপর দমন-পীড়ন, ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদ, সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগ, অনুপ্রবেশ চলছে। এ ছাড়া পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত জনগণকে ‘সন্ত্রাসী’, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’, ‘অবৈধ অস্ত্রধারী’ হিসেবে তকমা দেওয়া হচ্ছে। জুম্ম নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার মতো মানবতাবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।