মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল ও অনগ্রসরদের জন্য যৌক্তিক পর্যায়ে কোটা চায় বাম ছাত্রজোট

কোটাপদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোছবি: প্রথম আলো

শাসকদের সংকীর্ণ স্বার্থ ও বৈষম্যমূলক নীতির কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সামাজিক বৈষম্যের প্রতিরূপ হয়ে উঠেছে বলে মনে করে বামপন্থী সাতটি ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। তবে তারা বলেছে, কোটা বাতিল কোনোভাবেই সমস্যার সমাধান নয়, প্রয়োজন কোটার যৌক্তিক সংস্কার।

এ অবস্থায় জোটের নেতারা ‘বৈষম্যমূলক’ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল এবং অনুন্নত জনপদ, অনগ্রসর জাতিসত্তা ও বঞ্চিত শ্রেণির মানুষের জন্য যৌক্তিক পর্যায়ে কোটা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর জোটের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাগীব নাঈম। এতে বলা হয়, বৈষম্যমূলক আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সমতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কোটাপ্রথার প্রচলন। অথচ ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক স্বার্থে এ প্রথা নিজেই বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার বাস্তব উদাহরণ, মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর আজও ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার বিষয়টি।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কোটাপ্রথা কোনোভাবেই স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। আর্থসামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে কোটাব্যবস্থায় ধারাবাহিক সংস্কার যেখানে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছিল, সেখানে এখনো অস্বাভাবিক মাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা হয়েছে। বৈষম্যমূলক কোটাপ্রথা চালু হওয়ায় সারা দেশের ছাত্রসমাজ আন্দোলনে নেমেছে। ইতিমধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন চলছে। রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের লড়াকু অবস্থানের প্রতি গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট একাত্মতা পোষণ করছে।

একই সঙ্গে কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা সামাজিক সাম্য তৈরির বদলে বৈষম্যের প্রতিরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

অথচ ৫৩ বছর পরও বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা জারি রাখার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মর্মচেতনাকে অস্বীকার করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের অভাবে কোটাপ্রথার যুগোপযোগী সংস্কার না হওয়ায় চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে কেউ কেউ সম্পূর্ণ কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবি করছেন। বছরের পর বছর বৈষম্যের শিকার হওয়া জনগণের এ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক নয়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের চটকদার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল কোটা সংস্কারের। অথচ তাঁদের যৌক্তিক দাবিকে বিভ্রান্ত করতে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়। এখন হাইকোর্ট পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, কোটা পুনর্বহালের রায় বাতিল করে নতুন কমিশন বা কমিটি গঠন করে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কোটাপ্রথার যৌক্তিক সংস্কার করা যেতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান ও সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশিস চাকমা, ছাত্র ফেডারেশনের (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল) সহসভাপতি দীপা মল্লিক, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তওফিকা প্রিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন