ঢাকা ওয়াসা
কাউকে দায়িত্ব দিতে রাজি নন তাকসিম
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওয়াসার নথিতে তাকসিম ‘ওকে’ লিখে স্বাক্ষর করে পাঠানোর পর তা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
প্রায় প্রতিবছর ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে যান তাকসিম এ খান।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের অনুমতি দেয়।
ছুটিতে থাকার সময়ে এমডির দায়িত্বে থাকবেন সহিদ উদ্দিন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ছুটি দিলেও যুক্তরাষ্ট্রে বসে নথিপত্রে স্বাক্ষর করছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান, যা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা ঘটছে।
পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এবং নিজের চিকিৎসা করাতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন তাকসিম এ খান। গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ শাখা থেকে তাঁর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের অনুমতিপত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়, তাকসিম এ খানের ছুটিতে থাকার সময়ে সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) এ কে এম সহিদ উদ্দিনকে এমডির অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এখানে (ঢাকা ওয়াসা) সবকিছু গায়ের জোরে চলে। কেউ শুনতে না চাইলে তাকে আর কত বলা যাবে। মন্ত্রণালয় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।গোলাম মোস্তফা, চেয়ারম্যান, ঢাকা ওয়াসা বোর্ড
ওয়াসার নথিপত্র থেকে দেখা যায়, এমডির অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়া সহিদ উদ্দিন নথিপত্রে স্বাক্ষর করার পর তা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তাকসিম এ খানকে পাঠানো হচ্ছে। তিনি ‘ওকে’ লিখে স্বাক্ষর করে পাঠানোর পর তা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সহিদ উদ্দিন প্রথমে দাবি করেন তিনিই সব নথিতে স্বাক্ষর করছেন। তাকসিম এ খান কোনো নথিতে স্বাক্ষর করছেন না। অবশ্য পরে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে প্রশ্ন করে আমাকে বিব্রত করবেন না। আমার কোনো বক্তব্য নেই।’
এ বিষয়ে জানতে তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ওয়াসার রাজস্ব জোন-৩–এর বকেয়া পানির বিল আদায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা বাবদ খরচের জন্য অগ্রিম ১০ হাজার টাকার অনুমোদন দেয় সংস্থাটি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর এই নথিতে স্বাক্ষর করেন সহিদ উদ্দিন। একদিন পর ২৭ সেপ্টেম্বর ই–নথিতে ‘ওকে’ লিখে স্বাক্ষর করেন তাকসিম এ খান।
ঢাকা ওয়াসার অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়া একজন কর্মীর ভবিষ্য তহবিল ও অর্জিত ছুটির নগদায়ন পরিশোধের চিঠিতেও স্বাক্ষর করেছেন তাকসিম এ খান। ২ অক্টোবর এই নথিতে স্বাক্ষর করেন সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ইয়াজদানী। তাকসিম এ খান ৩ অক্টোবর এই নথি অনুমোদন করেন।
ওয়াসার ম্যাজিস্ট্রেট হাসান-বিন-মুহম্মদ আলীর নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর চার দিন বিশেষ অভিযান চালানোর অনুমতি দিয়েছে সংস্থাটি। অভিযান পরিচালনার জন্য ৪০ হাজার টাকা খরচের অনুমতি দেওয়ার নথিতে সহিদ উদ্দিন স্বাক্ষর করেন গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এক দিন পর ১ অক্টোবর তা স্বাক্ষর করেন তাকসিম এ খান।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়া তাকসিম এ খানের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তিনি প্রায় প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট সময় সেখানে থাকেন। দেশের বাইরে যাওয়ার আগে একটি অফিস আদেশ জারি করে অনলাইনে অফিস করার বিষয়টি জানিয়ে যেতেন। গত বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই তিন মাস তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। তখন যুক্তরাষ্ট্রে বসে অফিস করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।
এবারও কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসে অফিস করার অনুমতি চেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। সেই আবেদন নাকচ করে দেয় ঢাকা ওয়াসা বোর্ড। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, তাকসিম এ খান পূর্ণ ছুটিতে থাকবেন, ভার্চ্যুয়ালি কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও এবার যুক্তরাষ্ট্রে বসে অফিস করার অনুমতি দেওয়া হয়নি তাকসিম এ খানকে।
ছুটিতে থেকেও তাকসিম এ খানের নথিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা অবৈধ প্রক্রিয়া হলো। কিন্তু কী করা যাবে। এখানে (ঢাকা ওয়াসা) সবকিছু গায়ের জোরে চলে। কেউ শুনতে না চাইলে তাকে আর কত বলা যাবে। মন্ত্রণালয় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।’
এদিকে এমডির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহিদ উদ্দিনও বেশ কিছু নথিতে এমডি হিসেবে স্বাক্ষর করছেন। বারিধারাতে অবস্থিত ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৮–এর কার্যালয়ের ভূমি উন্নয়ন কর আগে পরিশোধ হয়নি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর এই ভূমির কর পরিশোধের নথির অনুমোদন দিয়েছেন সহিদ উদ্দিন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খাইরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি, তিনি (তাকসিম এ খান) এবার নথিপত্রে স্বাক্ষর করছেন না। নথিপত্রে স্বাক্ষর করছেন কি না, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’