২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

রোহিঙ্গা সংকট: ২০১৭ সালের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্কছবি: জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ওয়েবসাইট

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে পালানোর সময় কয়েক শ বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ফলকার টুর্ক।

জেনেভা থেকে শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন ফলকার টুর্ক। তিনি বলেন, এই নৃশংসতায় দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে এবং এ ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, নৈতিক দায়িত্ব এবং আইনি বাধ্যবাধকতা হিসেবে অতীতের অপরাধ ও ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তি অবশ্যই রোধ করতে হবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান বলেন, চলতি মাসে মিয়ানমারে সামরিক অভিযানের সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে। ওই অভিযানে সীমান্ত পেরিয়ে সাত লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। বিশ্ব বলছে, ‘আর পুনরাবৃত্তি নয়’, তার পরও রাখাইনে হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতি দেখা যাচ্ছে। সশস্ত্র সংঘাতের পক্ষগুলো রোহিঙ্গা ও অন্যদের বিরুদ্ধে হামলার দায় অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। তারা এমন আচরণ করছে, যেন তাদের রক্ষা করার ক্ষমতা নেই। এটি বিশ্বাসযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়েছে।

নিষ্ঠুরতার শিকার রোহিঙ্গা ও অন্যান্য বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় এগিয়ে এসে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা আসিয়ান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন ফলকার টুর্ক।

গত চার মাসে বুথিডং ও মংডু শহর সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দখল নিতে আরাকান আর্মির বড় ধরনের অভিযানে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে গেছে, যাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নাফ নদে সবচেয়ে মারাত্মক সশস্ত্র ড্রোন হামলায় অনেক লোক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কারা এই হামলার জন্য দায়ী, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ফলকার টুর্ক বলেন, হাজার হাজার রোহিঙ্গা হেঁটে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আরাকান আর্মি তাদের বারবার এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে তাদের আশ্রয় গ্রহণ খুব বেশি নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সীমান্ত পারাপার বন্ধ থাকায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যরা সামরিক বাহিনী ও তাদের মিত্র এবং আরাকান আর্মির মাঝে আটকা পড়ছে, তাদের নিরাপদ কোনো পথ নেই।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি এখন রাখাইনের বেশির ভাগ জনপদ নিয়ন্ত্রণ করে। উভয় পক্ষই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, জোর করে বাহিনীতে নিয়োগ, শহর ও গ্রামে নির্বিচারে বোমা হামলা এবং অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।

এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আলোকে সব পক্ষের বাধ্যবাধকতা এবং রোহিঙ্গাদের আরও ক্ষতির ঝুঁকি থেকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের আদেশের সাময়িক নির্দেশনার সম্পূর্ণ বিপরীত।

ফলকার টুর্ক বলেন, রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে তার জন্য সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি উভয়েই সরাসরি দায়ী। তিনি বলেন, উভয় পক্ষকে অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধ করতে হবে। সংঘাত থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে হবে। তাদের জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা পাওয়ার অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।