ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান: আহতদের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছেই

রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা জাকির সিকদার গত ১৮ জুলাই রাতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন। ২১ জুলাই অস্ত্রোপচারে তাঁর বাঁ পা কেটে ফেলা হয়। ছেলের শুশ্রূষা করছেন মা। বৃহস্পতিবার পঙ্গু হাসপাতালেছবি: খালেদ সরকার

কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ এবং পরবর্তীকালে সরকার পতনের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় আহত ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখনো যাঁরা হাসপাতালে আছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ইউনিট তৈরি করে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি সভায় এই বিশেষ ইউনিট করার সিদ্ধান্ত হয়।

যদিও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেকেই। তাঁদের পরিবারগুলো বলছে, অনেক ক্ষেত্রে বিনা মূল্যের ওষুধের বন্দোবস্ত হচ্ছে না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও ব্যয় হচ্ছে। একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অনেকেই গুরুতর আহত। তাঁদের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা দরকার।

সংঘাত-সহিংসতায় কত মানুষ আহত হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের ধারণা, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শুক্রবার পর্যন্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি হাসপাতালে ৪৩৯ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদের ১০ জনের পা কাটা গেছে, ১ জনের এক হাত কাটা গেছে। অনেকের হাতে, পায়ে বা শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর ক্ষত আছে। ৩২ জনের চোখে আছে ছররা গুলির আঘাত।

আরও পড়ুন

গত ১৮ জুলাই রাত নয়টার দিকে মেরুল বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন জাকির সিকদার (৩৩)। তিনি গুলশানের একটি পোশাকের দোকানে চাকরি করেন। তিনি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে পঙ্গু হাসপাতালে কথা হয় জাকির সিকদারের মা ও তাঁর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে। তাঁরা জানান, ২১ জুলাই অস্ত্রোপচারে জাকিরের বাঁ হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়। এরপর আরও তিনবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁরা ঠিক জানেন না, কবে হাসপাতাল থেকে জাকিরকে ছাড়া হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় আহত ১৪৪ জন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সংঘাত-সহিংসতায় কত মানুষ আহত হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের ধারণা, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

দীর্ঘ মেয়াদেও চিকিৎসা লাগবে

শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৭৫ জন। বুধবার সকালে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন মো. কাইয়ুম হোসেন (২৫), মো. মহিউদ্দিন রাব্বি (২৮) ও বাসিত খান মুসা (৭)। তাঁদের মধ্যে রাব্বিকে বৃহস্পতিবার সাধারণ শয্যায় নেওয়া হয়।

গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় মেরাদিয়া হাট এলাকায় মুসাকে আইসক্রিম কিনে দিতে নিজ বাসার নিচে নামেন দাদি মায়া ইসলাম (৬০)। তখন দুজনই গুলিবিদ্ধ হন। মায়া ইসলাম পরদিন মারা যান। আর মাথায় গুলিবিদ্ধ মুসা এখনো আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

মুসার মা নিশামনি বলেন, একমুহূর্তে তাঁর ছোট্ট পরিবারের সবকিছু ভেঙে পড়েছে। তাঁর ছেলের অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। দুশ্চিন্তায় তিনি অস্থির হয়ে পড়েছেন। ছেলের জন্য উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন; কিন্তু তাঁর আর্থিক সামর্থ্য নেই। ঋণ করে দেড় লাখ টাকা এরই মধ্যে খরচ করেছেন। সরকার যেন তাঁর ছেলেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠায়, সেই অনুরোধ জানান তিনি।

আরও পড়ুন

আইসিইউতে থাকা কাইয়ুমের মা আমেনা বেগম কথা বলার সময় কাঁদছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে অন্তত বেঁচে থাক। চোখের সামনে তো দেখতে পাব।’ কাইয়ুম রাজধানীর কদমতলী থানার মেরাজনগরের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। ১৮ জুলাই কাজলা থেকে মেরাজনগরে ফেরার পথে মাথা ও বাঁ চোখে ছররা গুলি লাগে। তাঁর বাঁ চোখ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁর বড় ভাই সাদ্দাম হোসেন বলেন, অনেক ওষুধ বাইরে থেকে কিনেছেন। পরে শুনেছেন, বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যাবে। বাইরে থেকে যা কেনা হয়েছে, সেগুলোর রসিদ রাখা হয়নি। এই অর্থ তিনি পাবেন কি না, জানেন না।

মুসার মা নিশামনি বলেন, একমুহূর্তে তাঁর ছোট্ট পরিবারের সবকিছু ভেঙে পড়েছে। তাঁর ছেলের অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। দুশ্চিন্তায় তিনি অস্থির হয়ে পড়েছেন। ছেলের জন্য উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন; কিন্তু তাঁর আর্থিক সামর্থ্য নেই। ঋণ করে দেড় লাখ টাকা এরই মধ্যে খরচ করেছেন। সরকার যেন তাঁর ছেলেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠায়, সেই অনুরোধ জানান তিনি।

আহত আরেকজন মো. মহিউদ্দিন রাব্বি পুরান ঢাকার শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্টগ্র্যাজুয়েট কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) পাস করেছেন। এখন মাস্টার্সে ভর্তির অপেক্ষায়। তিনি জানান, সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে আনন্দমিছিলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর বাঁ চোখ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত। তলপেটের ডান পাশে এখনো গুলি ঢুকে আছে। তিনি বলেন, ‘আমার এখন একটাই চাওয়া, সুচিকিৎসা যেন পাই।’

৫ আগস্ট বিকেলে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মুক্তাপুরে আনন্দমিছিল দেখার সময় পেট্রলবোমায় দগ্ধ হন মো. ফারুক হোসেন (৫০) ও তাঁর ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. মানিক হোসেন (১৬), আলতাফ হোসেন (৫৫) ও তাঁর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন (৩০)।

আরও পড়ুন

ফারুক হোসেনের মেয়ে মোসাম্মৎ জুলেখা বলেন, বাবা ও ভাইয়ের অবস্থা এত খারাপ যে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা লাগবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন বাবা ও ভাইয়ের জন্য দুই ব্যাগ করে চার ব্যাগ প্লাজমা লাগছে। একেক ব্যাগে তাঁর খরচ পড়ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। এই টাকা হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় না।

বড় ভাই সাদ্দাম হোসেন বলেন, অনেক ওষুধ বাইরে থেকে কিনেছেন। পরে শুনেছেন, বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যাবে। বাইরে থেকে যা কেনা হয়েছে, সেগুলোর রসিদ রাখা হয়নি। এই অর্থ তিনি পাবেন কি না, জানেন না।

হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন মো. ইসরাফিল (১৫)। তার বাবা ভ্যানচালক সাইফুল আলম। তিনি বলেন, ইসরাফিল মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বেথুলিয়ায় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ৩ আগস্ট বিক্ষোভে অংশ নিয়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলি তার বাঁ কাঁধে ক্ষত সৃষ্টি করে পেটে ঢুকে যায়। দুই দিন ফরিদপুরে চিকিৎসা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ছেলেকে নিয়ে আসেন সাইফুল আলম। তিনি বলেন, সাধারণ কিছু ওষুধ ও শয্যা বিনা মূল্যে পাচ্ছেন। তবে ছেলের জন্য প্রতিদিন চারটি করে ডাব, পুষ্টিকর খাবার কিনে খাওয়ান। নিজেদের খাবার খরচ আছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন হাজার তিনেক টাকা তাঁর খরচ হয়।

গতকাল যোগাযোগ করা হলে ইসরাফিল মুঠোফোনে জানায়, ঢাকা মেডিকেল থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মা–বাবা মনে করেন, সে সুস্থ হয়নি। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক জানান, আহত ব্যক্তিদের অনেকের দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা প্রয়োজন হবে। একেক পর্যায়ে একাধিক অস্ত্রোপচার লাগবে। হাসপাতালে থাকা পর্যন্ত রোগীরা সেবা পাবেন। এরপর কী হবে, সেটা চিকিৎসকেরা জানেন না। যদিও এসব রোগীর জীবনভর কিছু না কিছু জটিলতা থাকবে এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।

বাবা ও ভাইয়ের অবস্থা এত খারাপ যে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা লাগবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন বাবা ও ভাইয়ের জন্য দুই ব্যাগ করে চার ব্যাগ প্লাজমা লাগছে। একেক ব্যাগে তাঁর খরচ পড়ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। এই টাকা হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় না।
মোসাম্মৎ জুলেখা

সরকার কী করছে

আহত ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসার বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকালের সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল বিকেলে অধ্যাপক আহমেদুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। সেই বিবেচনা থেকে আহত ব্যক্তিদের জন্য ‘স্পেশালাইজড ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিট’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ইউনিটের জন্য পৃথক চিকিৎসক ও নার্স রাখার কথা বলা হয়েছে। মানুষের অবাধ যাতায়াত সেখানে থাকবে না।

ঢাকা মেডিকেলসহ সব সরকারি হাসপাতালে মানুষ বিনা মূল্যে চিকিৎসা পান। তারপরও কিছু ওষুধ বা সরঞ্জাম রোগীকে কিনতে হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। আজ রোববার এই কমিটির প্রথম সভা হবে বলে জানা গেছে। আহত যেসব ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন, তাঁরা বা তাঁদের পরিবার কোন ধরনের সহায়তা পাবে, তা ঠিক করবে এই কমিটি।

আহমেদুল কবীর বলেন, ‘এখন থেকে রোগীকে কোনো কিছুই কিনতে হবে না। বেসরকারি হাসপাতালকেও আমরা চিঠি দিয়ে বলেছি, তারা যেন কম মূল্যে অথবা বিনা মূল্যে আহতদের চিকিৎসা দেয়। তারা তো সারা বছর ব্যবসা করে। এই সময় তারা কিছুটা ছাড় দেবে, এই আশা আমাদের আছে।’

এরই মধ্যে আহত রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা ৬৯টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই রোগীদের বিনা মূল্যে সেবা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এটা কার্যকর করা হবে।’

অবশ্য বিনা মূল্যে চিকিৎসার মধ্যে কী কী সেবা থাকবে, তা অনেকের কাছে স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত শয্যাভাড়া বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। ওষুধ, অস্ত্রোপচার বিনা মূল্যে দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্দেশনায় বিষয়টি স্পষ্ট করা নেই। ওষুধ ও অস্ত্রোপচার বিনা মূল্যে দিতে হবে কি না, সেটা আরও স্পষ্টভাবে জানতে হাসপাতালগুলো নিজেরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিতে পারে।

এখন থেকে রোগীকে কোনো কিছুই কিনতে হবে না। বেসরকারি হাসপাতালকেও আমরা চিঠি দিয়ে বলেছি, তারা যেন কম মূল্যে অথবা বিনা মূল্যে আহতদের চিকিৎসা দেয়। তারা তো সারা বছর ব্যবসা করে। এই সময় তারা কিছুটা ছাড় দেবে, এই আশা আমাদের আছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর

অবশ্য আহত ব্যক্তিদের সবার তালিকা করে তাঁদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকারের পক্ষ থেকে বহন করার সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল। ছয় দিন আগে ১১ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। তখন বলা হয়েছিল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সব হাসপাতালকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। আন্দোলনে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। আজ রোববার এই কমিটির প্রথম সভা হবে বলে জানা গেছে। আহত যেসব ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন, তাঁরা বা তাঁদের পরিবার কোন ধরনের সহায়তা পাবে, তা ঠিক করবে এই কমিটি।

জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল মনে করেন, সরকার পরিবর্তনের এই সময়ে অর্থ ছাড়ের জটিলতা, অর্থসংকট, হাসপাতালগুলোর রোগী ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার অভাবে আহত রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আহত রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বিনা মূল্যের চিকিৎসা হলে তা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যেই হতে হবে। ওই রোগীর জীবনে যতবার প্রয়োজন হয়, ততবারই তাঁকে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে যথাযথ চিকিৎসা দিতে হবে।