আগের আইনের অধীন চুক্তি সম্পাদন ও চুক্তির অধীন কার্যক্রম চলমান রাখার বৈধতা–সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (রহিতকরণ) অধ্যাদেশের দুটি ধারা প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ রুল দেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন করা হয়। এ আইন রহিত করে গত ২৮ নভেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
২০১০ সালের ওই আইন রহিতকরণ ও হেফাজত সম্পর্কে অধ্যাদেশটির ২ নম্বর ধারায় বলা আছে। অধ্যাদেশের ২(২)(ক) ধারার ভাষ্য, রহিত করার আগে ওই আইনের (২০১০ সালের) আওতায় সম্পাদিত চুক্তি বা সম্পাদিত চুক্তির অধীন গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বৈধভাবে সম্পাদিত বা গৃহীত হয়েছে বলে গণ্য হবে। ২(২)(খ) ধারার ভাষ্য, ওই আইনের আওতায় সম্পাদিত চুক্তির অধীন চলমান কোনো কার্যক্রম এমনভাবে অব্যাহত থাকবে অথবা নিষ্পন্ন করতে হবে যেন ওই আইন রহিত হয় নাই। অধ্যাদেশের এই দুটি ধারার [২(২)(ক) ও ২(২)(খ)] বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষে গত সপ্তাহে রিটটি করা হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শামীমা সুলতানা দিপ্তি। শুনানি নিয়ে আদালত আজ রুল দেন।
রুলে অধ্যাদেশের ধারা দুটি [২(২)(ক) ও ২(২)(খ)] সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব, আইনসচিব, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়রম্যানসহ বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পরে আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ২০১০ সালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের অধীন যতগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে চুক্তি করা হয়েছে, সেগুলো কেন বাতিল করা হবে না, তা–ও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। ওই আইনের অধীন কার্যক্রমের কারণে রাষ্ট্রের আর্থিকসহ বিভিন্ন ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে লাইসেন্সধারীদের কাছ থেকে সেই ক্ষতি আদায় করে রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
রিটের যুক্তি সম্পর্কে এই আইনজীবী বলেন, আগের আইনে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ও অর্থ লুণ্ঠন হয়েছে। অধ্যাদেশ অনুসারে এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। তাহলে অনিয়মে জড়িত কারও কাছ থেকে অর্থ আদায় ও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে না। অধ্যাদেশ অনুসারে আইনের আওতায় সম্পাদিত চুক্তির অধীন চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলা হয়েছে। তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্টের চলমান ক্যাপাসিটি চার্জের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হতেই থাকবে। মূলত এসব যুক্তি তুলে ধরে রিটটি করা হয়।