২০২৪–এ এসেও মুনীর চৌধুরীর কর্ম প্রাসঙ্গিক

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর স্মরণে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ছবি: প্রথম আলো

মহান ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে রচিত কবর নাটকটি দমনমূলক যেকোনো রাষ্ট্রকাঠামোতেই প্রযোজ্য। নাটকটির চরিত্র ও বিষয়বস্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে শেখায়। এই নাটকের একটি শক্তিশালী ভাষা রয়েছে। মুনীর চৌধুরীর কবরসহ তাঁর কাজগুলো ২০২৪ সালে এসেও প্রাসঙ্গিক।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর স্মরণে এক সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে। শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এ সেমিনার হয়। এতে ‘মুনীর চৌধুরীর কবর নাট্যের অন্য পাঠ: স্মৃতির রাজনীতি ও রাজনৈতিক অজ্ঞান মানের বিবিধ রূপরেখা’ শীর্ষক প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা হয়। সেমিনারে এ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহমান মৈশান।

সেমিনারে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, মুনীর চৌধুরী জেলে বসে কবর নাটক লিখেছিলেন। যত দিন পাকিস্তান ছিল, তত দিন তাঁর এই নাটকের অনেক ধার ছিল, বিদ্রোহী চেতনা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ হয়ে যাওয়ার পর সেই চেতনা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। গত ১৫ বছরে কতবার মুনীর চৌধুরীর নাম শোনা গেছে বা কবর নাটকের নাম শুনেছেন। মুনীর চৌধুরী এখন বিস্মৃত। নতুন প্রজন্ম তাঁর নাম উল্লেখ করছে না। ২০২৪ সালে এসে তাঁর নাটকের ধার আছে কি না, তা আলোচনার বিষয়। মুনীর চৌধুরী একেবারেই সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের আদি ও শক্ত স্তম্ভ। নতুন করে মুনীর চৌধুরীকে বুঝতে হবে। তাঁর কবর নাটক যেকোনো প্রেক্ষাপটেই শিকড় রেখে যায়।

নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘থিয়েটার থেকে যদি মুনীর চৌধুরী সম্মাননা না দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো সে আরও বিস্মৃত হয়ে যেত। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তার সঙ্গী ও ছাত্র যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন মুনীর চৌধুরী কৃতিত্বকে তুলে ধরতে।’

মুনীর চৌধুরীর লেখার মধ্যে স্বাধীন গণতান্ত্রিক ও যুদ্ধবিরোধী আকাঙ্ক্ষা ছিল উল্লেখ করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, কবর নাটকের সংলাপের ভাষা দুর্দান্ত। কবর নাটককে এমন এক সময়ে বিবেচনা করা যাচ্ছে, যা ২০২৪–এ জাতীয়তাবাদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। কবর নাটকটি একটি শক্তিশালী ভাষা।

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় শাহমান মৈশান বলেন, কবর নাটকের মুর্দা ফকির চরিত্রকে যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যাখ্যা করা যায়। মুর্দা ফকির প্রতিরোধকারী, মানুষের পক্ষে দাঁড়ায়। যারা দমন করে, হত্যাযজ্ঞ চালায়, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। দমনমূলক রাষ্ট্রযন্ত্রের সামনে সম্ভাব্য স্বপ্ন হাজির করে মুর্দা ফকির। এই নাটক ১৯৭১ সালে মৃত্যুর মিছিল পেরিয়ে গণ প্রতিরোধের ইতিহাসের পূর্বাভাস দেয়। কবর শুধু ভাষা আন্দোলনের নয়—১৯৬৯, ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানেরও নাট্য।

কবর নাটক ছাড়াও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন নিয়েও সেমিনারে আলোচনা হয়। অভিনেত্রী সারা যাকের বলেন, এখন যেভাবে সবকিছু দেখা হচ্ছে, তার মধ্যে বৈচিত্র্য আছে। সমাজের একটা অংশকে উপেক্ষা করা হয়েছে সব সময়।

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ভাষা  আন্দোলনের পর সংস্কৃতি হয়ে যায় যুদ্ধের জমি। গত ৫৩ বছরের যে বাংলাদেশ, তার দায় এই বুদ্ধিজীবীদের ওপর বর্তাবে না। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাঁদের অবদান কম নয়।