মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমু ও কামরুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
১৮ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানিতে অন্য আসামিদের সঙ্গে এই দুজনকে হাজির করার নির্দেশও দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আজ বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক দুই মন্ত্রী আমু ও কামরুলকে হাজির করার জন্য ২ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের কাছে পৃথক দুটি আবেদন করেছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন ও বি এম সুলতান মাহমুদ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের আজ (বুধবার) ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুকে গত ৬ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কামরুল ইসলামকে গত ১৯ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হত্যা মামলায় উভয়কে রিমান্ডে পায় পুলিশ। রিমান্ড শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। এবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হলো।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলা করেন চিফ প্রসিকিউটর। মামলায় আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ৪৫ জন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যকে। ইতিমধ্যে তাঁদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক দুই মন্ত্রী আমু ও কামরুলকে হাজির করার জন্য ২ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের কাছে পৃথক দুটি আবেদন করেছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন ও বি এম সুলতান মাহমুদ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের আজ (বুধবার) ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
আজ বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে আমু ও কামরুলকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। এ সময় তাঁদের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন ও বি এম সুলতান মাহমুদ।
দুই প্রসিকিউটরের বক্তব্য শুনে ট্রাইব্যুনাল সাবেক দুই মন্ত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া তাঁদের ১৮ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক দুই মন্ত্রীর (আমু ও কামরুল) বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তদন্তে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেগুলো ট্রাইব্যুনালকে শোনানো হয়েছে। সাবেক দুই মন্ত্রীও শুনেছেন। ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী সময়ে প্রসিকিউটরদের আবেদন মঞ্জুর করেন। সাবেক দুই মন্ত্রীকে ট্রাইব্যুনালের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেওয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি। আদেশ অনুযায়ী সেদিন অন্য আসামিদের সঙ্গে আবার তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।
সাবেক দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, আমু ১৪–দলীয় জোটের সমন্বয়ক। সমন্বয়ক থাকা অবস্থায় গত ১৯ জুলাই দেশব্যাপী মানবতাবিরোধী অপরাধ চলমান ছিল। তখন গণভবনে ১৪–দলীয় জোটের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে আমু ছিলেন একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। বৈঠকে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত হয়। কারফিউয়ের সময় দেখামাত্র গুলির সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে সারা দেশে নিরস্ত্র সাধারণ ছাত্র-জনতা ওপর নির্বিচারে গুলি ছোড়া হয়। তাঁদের হত্যা করা হয়। চিরতরে পঙ্গু করা হয়। অন্ধ করা হয়। আহত করা হয়। সেদিনের বৈঠকে যাঁরা গণভবনে উপস্থিত ছিলেন, যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, যাঁরা নির্দেশনা দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এই দুজন ছিলেন। তাঁরা এই অপরাধের দায় এড়াতে পারেন না।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন বলেন, কামরুল ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁর এলাকায় নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাঁর অনুগামী দলীয় নেতা-কর্মীরা অস্ত্র নিয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চায়নিজ রাইফেল দিয়ে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। এসব অভিযোগের সত্যতা তদন্তে পাওয়া গেছে।
যাত্রাবাড়ীর সাবেক ওসিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আজ দুপুর ১২টার পর আবুল হাসানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন। পরে আদালত তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তাঁকে ১২ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন সাংবাদিকদের বলেন,
আবুল হাসান যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি। গত ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকায় ইমাম হাসান তাইম নামের একজনকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় এক বন্ধু ইমান হাসানকে পেছন থেকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন বন্ধুকেও গুলি করে পুলিশ। বন্ধু যখন ইমাম হাসানকে ফেলে পালিয়ে যান, তখন যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন এই ইমাম হাসানকে গুলি করেন। পরবর্তী সময়ে ইমাম হাসানকে যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে তাঁর চেহারা বিকৃত করে দেওয়া হয়। এই কাজে যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসান নেতৃত্ব দিয়েছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর তাঁকে এই মামলায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর আবুল হাসানকে হত্যা মামলা গ্রেপ্তার করা হয়। তার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।