প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ
দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল চালুসহ চার নিবেদন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল দ্রুত পুনরুজ্জীবিত করাসহ চার নিবেদন নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের কাছে স্মারকপত্র দিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ বুধবার দুপুরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করে। এ সময় ওই স্মারকপত্র দেওয়া হয়।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও মাহফুজা খানম, সহসভাপতি মুনতাসীর মামুন, কেন্দ্রীয় নেতা আরমা দত্ত, আইটি সেলের প্রধান আসিফ মুনীর ও কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্মারকপত্র তুলে ধরেছি, প্রধান বিচারপতি দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তাঁর দিক থেকে যা করণীয়, সে বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা বলেছি, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল শুনানি দৃশ্যত ২০১৬ সাল থেকে স্থবির হয়ে আছে। প্রধান বিচারপতি আমাদের বলেছেন, আপিল শুনানি শুরু হয়েছে, আজকের কার্যতালিকায় এক আসামির আপিল শুনানির জন্য ছিল।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, মামলাজট নিরসন ও এসব আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এই স্মারকপত্রের অনুলিপি বিকেলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বরাবর পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের ২৫ মার্চ। যাত্রা শুরুর পর দুই বছরের মাথায় ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়, যা ট্রাইব্যুনাল-২ নামে পরিচিতি পায়। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুই ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করে আবার একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। এখন একটি ট্রাইব্যুনালে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১) চলছে বিচার কার্যক্রম। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে এ নিয়ে গত এক যুগের বেশি সময়ে ৫৪টি মামলার রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এসব মামলায় দণ্ডিত আসামি ১৪৯ জন।
স্মারকলিপিতে নির্মূল কমিটি বলেছে, ট্রাইব্যুনাল ব্যক্তি হিসেবে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় গণহত্যাকারী ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীর বিচার করলেও এখন পর্যন্ত গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী সংগঠনগুলো এবং ’৭১-এ পাকিস্তানি হাইকমান্ডের বিচার কার্যক্রম আরম্ভ হয়নি।
নির্মূল কমিটির চার নিবেদন
এক. সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা কর্তৃক স্থগিত দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল দ্রুত পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
দুই. আপিলের জটিলতা নিরসনের জন্য আপিল বিভাগে আরও বিচারপতি নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি অপেক্ষমাণ মামলাগুলো দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করা।
তিন. কম্বোডিয়া ও অন্য কয়েকটি দেশে যুদ্ধাপরাধের মামলায় আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ ট্রাইব্যুনালে গিয়ে দ্রুত আপিল শুনানি নিষ্পত্তি করেন। বাংলাদেশের মতো কোথাও এসব ট্রাইব্যুনালের মামলার আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয় না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কম্বোডিয়ার মতো আপিলের ব্যবস্থা করা হলে ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে বলে নির্মূল কমিটি মনে করে।
চার. পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আরম্ভ হওয়ার পর নির্মূল কমিটি এই বিচার কার্যক্রমের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আবেদন করেছিল মামলার সব কার্যবিবরণী ও দলিলপত্র যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার জন্য। যাতে বিচারকার্য শেষ হওয়ার পর নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের প্যালেস অব জাস্টিসের মতো আমাদের ট্রাইব্যুনালের বর্তমান ভবনটি জাদুঘর ও আর্কাইভে রূপান্তরিত করা যায়। ফলে আগামী প্রজন্ম এবং বিশ্ববাসী ’৭১-এর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতার পাশাপাশি জানতে পারবে কী ধরনের প্রতিকূলতার ভেতর এবং কী ধরনের মেধা ও দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশ গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হওয়ার ৪০-৫০ বছর পরও সাফল্যের সঙ্গে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পেরেছেন।