রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা: সেই মিয়া আরেফি, হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাক অব্যাহতি পেলেন
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিয়া আরেফি, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পল্টন থানায় দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা থেকে মিয়া আরেফি, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাক হোসেনকে অব্যাহতি দিতে ১ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন আদালত। ফলে মামলা থেকে তাঁরা অব্যাহতি পেয়েছেন।
ইশরাক হোসেনের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাঁর মক্কেল ইশরাক হোসেনসহ তিনজনকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের কারণে নয়াপল্টনে দলটির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরপর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মিয়া আরেফি। এ সময় সেখানে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন। পরদিন ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মিয়া আরেফিকে আটক করে পুলিশ। ওই দিনই ‘মিথ্যা পরিচয়ে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের’ অভিযোগে মিয়া আরেফি, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একটি মামলা করেন মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক ব্যক্তি। সেই মামলায় মিয়া আরেফি, হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাক হোসেন গ্রেপ্তার হন।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন (গত ৬ আগস্ট) মিয়া আরেফি, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাক জামিন পান।
পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ডিবির পরিদর্শক সৈয়দ মনিরুজ্জামান উল্লেখ করেন, মামলার বাদী মহিউদ্দিন শিকদার আওয়ামী লীগের মতাদর্শী। অপর দিকে আসামি মিয়া আরেফি একজন বাংলাদেশি ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। তিনি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংরক্ষণে ভূমিকা পালন করে আসছেন। আর চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রেখেছেন। আর ইশরাক হোসেন দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপির নেতা। ঘটনার দিন কাকতলীয়ভাবে পল্টনে বিএনপির অফিসে উপস্থিত ছিলেন।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলার বাদী ভুল তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ দায়ের করেন। বাদী তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার মতো সুনির্দিষ্ট তথ্য–প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ (তথ্যগত ভুল) হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে বলে আদালতে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মনিরুজ্জামান।
মামলায় মহিউদ্দিন শিকদার দাবি করেছিলেন, সেদিন বিএনপির পল্টন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বলে পরিচয় দেন মিয়া আরেফি। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, মিয়া আরেফি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা নন। তিনি মার্কিন সরকারের কেউ নন।
গত বছরের ২ নভেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী আদালতকে বলেছিলেন, ‘মিয়া আরেফি নামের কাউকে আমি চিনি না। সেদিন নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে আমার পরিচিত কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পেয়ে সেখানে যাই। কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে গিয়ে আহত কয়েকজনকে দেখতে পাই। পরে বিএনপি নেতা ইশরাকের সঙ্গে দেখা হয়। এরপর বিএনপি অফিসে যাই। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। পরে চেয়ার দেওয়া হলে আমি বসি। আমি কোনো কথা বলিনি।’
গত বছরের ২ নভেম্বর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিয়া আরেফি ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ আমলে নেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।