নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেলেন কক্সবাজারের দায়রা জজ
আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে করা এক মামলায় আসামিদের জামিন দেওয়ার বিষয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন কক্সবাজারের দায়রা জজ। তবে আসামিদের দেওয়া যে জামিন আদেশ ঘিরে দায়রা জজকে ব্যাখ্যা দিতে ডাকা হয়েছিল, সেই আদেশ প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ওই মামলায় আসামিদের জামিন মঞ্জুর করে দায়রা জজের দেওয়া আদেশ কেন বাতিল হবে না, রুলে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আদেশের আগে কক্সবাজারের দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, ‘বিচারে কেন তাড়াহুড়া করবেন? বিচার তাড়াহুড়া করার বিষয় নয়। যা হয়ে গেল, তা কারও জন্যই কাম্য নয়।’
ওই মামলায় গত ২১ মে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৯ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই দিন কক্সবাজারের দায়রা জজ ৯ আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন মামলার বাদী ও রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রিনা।
আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২১ জুন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ব্যাখ্যা জানাতে কক্সবাজারের দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
ওই মামলায় আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠাতে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়া সত্ত্বেও একই দিন দায়রা জজের আসামিদের জামিন মঞ্জুর করা নিয়ে শুনানিতে প্রশ্ন ওঠে।
অন্যদিকে আদালতে হাজির হয়ে নিঃর্শত ক্ষমা প্রার্থনা করেন কক্সবাজারের দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। ২০ জুলাই শুনানি নিয়ে আদালত আজ আদেশের জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ এ আদেশ হয়।
আজও হাইকোর্টে হাজির হন মোহাম্মদ ইসমাইল। তাঁর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ। আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন; সঙ্গে ছিলেন মো. আবুল কাশেম ও আরিফ চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
আদেশের পর আইনজীবী আলতাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার পর কক্সবাজারের দায়রা জজকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই মামলায় দায়রা জজের দেওয়া জামিন আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন। প্রতিপক্ষকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শুনানির বিষয়ে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, দায়রা জজ মন থেকে ক্ষমা চেয়েছেন কি না, তা জানতে চান আদালত। তখন দায়রা জজ বলেন, তিনি মন থেকেই ক্ষমা চেয়েছেন। যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা সবার জন্য লজ্জার বলে শুনানিতে মন্তব্য করেন আদালত।
ঘটনার পূর্বাপর
আবেদনকারী পক্ষ জানায়, জমির দখল নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে নয়জনের বিরুদ্ধে খোদেস্তা বেগম কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন।
মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। গত ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট তাঁদের ছয় সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন।
আসামিরা গত ২১ মে দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। সেদিন আদালত ৯ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগেই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশের কপি পাননি উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন।
একই দিন দায়রা জজ তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে খোদেস্তা বেগম হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন।