জবির সেই ছাত্রীর মুঠোফোন ছিনতাইকারীরা কারওয়ান বাজারে বিক্রি করেন

গত ২১ জুলাই তানজিল পরিবহনের বাসে করে ফেরার সময় কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে পারিশার মুঠোফোন ছিনতাই হয়
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে ছিনতাইকারীকে ধরে পেটানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারিশা আকতারের মুঠোফোনটি অবশেষে উদ্ধার হয়েছে। কারওয়ান বাজারের একটি দোকান থেকে ছিনতাইকারীদের বিক্রি করে দেওয়া মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়।

আজ বুধবার সকালে তেজগাঁও থানায় সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রুবাইয়াত জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।

রুবাইয়াত বলেন, গত ২১ জুলাই রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পারিশা আকতারের মোবাইলটি বাস থেকে ছিনিয়ে নেয় রিপন ওরফে আকাশ। তাকে ধাওয়া করলে মুঠোফোনটি আরেক ছিনতাইকারীর (শিশু হওয়ায় নাম দেওয়া হলো না) কাছে হাতবদল করে পালিয়ে যায় রিপন।

রুবাইয়াত জামান আরও বলেন, রিপন মোবাইলটি ছিনিয়ে দৌড় দেয় কিন্তু তার পিছু পিছু অন্য এক যুবক দ্রুত হাঁটতে শুরু করে। ওই যুবকের সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে তার সম্পর্কে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং তাকে ২৪ জুলাই কারওয়ান বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা রুবাইয়াত বলেন, ১৭ বছর বয়সী ছেলেটি প্রথমে ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বীকার করে তারা দুজন মিলে এ কাজটি করেছে।

ইতিমধ্যে ছিনতাইকারী রিপনও গ্রেপ্তার হয়েছে। রুবাইয়াত বলেন, রিপনও প্রথমে ছিনতাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। তবে ১৭ বছরের ছেলেটি আর রিপনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদের পর সে স্বীকার করে। তার তথ্যমতে কারওয়ান বাজারের একটি দোকান মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। ছিনতাই করা মুঠোফোন কেনার অপরাধে দোকানটির মালিক মো. শফিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছেলেটি ও রিপন বলে, তারা ৪ হাজার টাকায় মুঠোফোনটি বিক্রি করে দেয়। রিপন নেয় ১ হাজার টাকা আর ১৭ বছরের ছেলেটি নেয় ৫০০ টাকা। বাকি টাকায় তারা মদ কিনে খায়।

রুবাইয়াত বলেন, তিনজনকে অভিযুক্ত করে আজ বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, শুধু ভাইরাল কিংবা গণমাধ্যমে আসলে যে আমরা কাজ করি, তা নয়। গত মাসে আমরা প্রায় ৪০টি চুরি ছিনতাইয়ের মোবাইল উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিয়েছি।

আরও পড়ুন

গবেষণার কাজে গত ২১ জুলাই সকালে রাজধানীর সদরঘাট থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানা গিয়েছিলেন পারিশা। সারা দিন কাজ করে তানজিল পরিবহনের বাসে করে ফেরার সময় কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে এক ছিনতাইকারী তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়।

ওই ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করে ধরতে পারেননি তিনি। তবে আরেকজনের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর সময় এক ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলেন। কৌশলে ওই ছিনতাইকারীর এক সহযোগীকেও আটক করা হয়। পরে দুই ছিনতাইকারীকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন ওই শিক্ষার্থী। দীর্ঘ এক বছর মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে বন্য প্রাণী হাতির ওপর গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। মুঠোফোনে ওই সব তথ্য থাকায় প্রতিবেদন তৈরিতে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়ে তাঁকে।

আজ সংবাদ সম্মেলনে পারিশা বলেন, আমি আসলে অনেক খুশি। পুলিশ প্রতিনিয়ত আমাকে আপডেট জানিয়েছে। ছিনতাইকারী ধরা পড়েছে তাতে খুশি। আর ছিনতাইকারী যাতে আবার ছাড়া পেয়ে ছিনতাইয়ে না জড়ায়। ছিনতাইকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য আমার যেখানে যাওয়া প্রয়োজন আমি সেখানে যাব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই মোবাইলটি খুব দরকার ছিল। তাই ছিনিয়ে নেওয়ার পর ঝুঁকি নিয়ে তাড়া করি। ২৮ জুলাই থিসিস জমা দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন পারিশা।