বুয়েটের শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করতে পারবেন না জানিয়ে জরুরি বিজ্ঞপ্তি

বুয়েট

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ক্লাব বা সোসাইটি ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি অথবা অন্য যেকোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হতে পারবেন না।

গত শনিবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষর করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিটি বুয়েটের সব নোটিশ বোর্ডে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক দপ্তরে বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন রেজিস্ট্রার।

নতুন করে জারি করা এই জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের নিয়মগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং তা অমান্য করলে অধ্যাদেশে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, বুয়েট অরডিন্যান্সের বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনের ১৬ নম্বর ধারার আলোকে ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের ৫০৩তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুয়েটের ঐতিহ্য রক্ষা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, মেধার যথাযথ বিকাশ ও মূল্যায়ন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে উন্নীত করার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ছাত্রলীগের এক নেতার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিলে উচ্চ আদালতের এক রায়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বাধা কেটে গিয়েছিল। এর ছয় মাস পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত শনিবার নতুন করে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখার কথা জানাল বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

বুয়েটের শেরে বাংলা হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর একটি ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ জারি করে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এর প্রায় সাড়ে চার বছর পর গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান, এমনটি উল্লেখ করে ২৯ মার্চ আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জন করেন।

২৭ মার্চ মধ্যরাতের পর ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগতদের’ প্রবেশ ও রাজনৈতিক সমাগমের ‘সংগঠক’ হিসেবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা বুয়েট ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম ওরফে রাব্বিকে অভিযুক্ত করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটের হল থেকে ইমতিয়াজের আসন বাতিল করা হয়।

ইমতিয়াজ হোসেনের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২ এপ্রিল বুয়েট কর্তৃপক্ষের ২০১৯ সালের ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’-র কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। এর ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিতে বাধা কেটে যায়। সে সময় বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ‘শোডাউন’ দেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। বুয়েট কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। তবে এর মধ্যে বুয়েট ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান রাজনৈতিক কার্যক্রম ছিল না।