মেট্রোরেলে এমআরটি পাস কেন কালো তালিকাভুক্ত হয়, পেতে কত দেরি
রাজধানীর বাসিন্দা মীর মোফরাদ জাফর মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী। প্রায় আড়াই মাস আগে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল স্টেশনে তাঁর এমআরটি পাসটি কালো তালিকাভুক্ত (ব্ল্যাক লিস্টেড) হয়। তিনি এখনো এর কারণ জানতে পারেননি। পাসটি ফেরতও পাননি।
‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে এই বিড়ম্বনা নিয়ে তিনি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে আরও কয়েকজন যাত্রী একই সমস্যার কথা জানান। একজন যাত্রী বলেন, মতিঝিল স্টেশন থেকে পাঞ্চ করার পর তাঁকে জানানো হয় পাসটি ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’। ওই পাস আবার নিতে গেলে তাঁকে ২৫০ টাকা দিতে হবে। এটা জানার পর তিনি নতুন পাস নেন।
তানজিদ হাসান নামে আরেক যাত্রী জানান, তাঁর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ৬-৭ মাস পর তিনি ৫০ টাকা দিয়ে নতুন পাস নেন। তাঁর আগের পাসে ৩০০ টাকা ব্যালেন্স ছিল, সেটা তিনি নতুন পাসে ফেরত পেয়েছিলেন।
মেট্রোরেলে যাতায়াতের জন্য ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পাস ও একক যাত্রা টিকিট রয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেনার ঝামেলা এড়াতে অনেক যাত্রী, বিশেষ করে নিয়মিত যাত্রীরা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পাস করে নেন। এতে ব্যস্ত সময়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর ঝক্কি এড়ানোর পাশাপাশি ভাড়া ১০ শতাংশ কমে পাওয়া যায়। এ ছাড়া এমআরটি পাসধারীরা স্টেশনের টিকিট কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ৩০ মিনিট পর পর্যন্ত মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারেন। এমআরটি পাসে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যালেন্স বা স্থিতি রাখা যায়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) নীতিমালায় দেখা যায়, যাত্রীর ব্যবহারজনিত ‘অনিয়মের’ কারণে কার্ড বা পাস কালো তালিকাভুক্ত হয়। তবে ফেরত পেতে দেরি হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ কর্তৃপক্ষ জানায়নি।
ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী মীর মোফরাদ জাফর (৩২) গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি মেট্রোরেল স্টেশনে তাঁর এমআরটি পাস পাঞ্চ করার সময় কাজ করছিল না। স্টেশন কার্যালয় থেকে তাঁকে জানানো হয়, পাসটি ব্ল্যাক লিস্টেড বা কালো তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। তিনি যেখানে থেকে পাস ইস্যু করেছেন, সেখানে তাঁকে কথা বলতে হবে। তিনি শেওড়াপাড়া স্টেশনে এসে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে তাঁর পাসটি জমা দেন। তাঁকে জানানো হয়, সম্ভাব্য সাত দিনের মধ্যে পাসটি ঠিক হলে তাঁকে ফোন করে জানানো হবে। এরপর প্রায় আড়াই মাস হয়ে গেলেও তিনি পাসটি ফেরত পাননি।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) নীতিমালায় দেখা যায়, যাত্রীর ব্যবহারজনিত ‘অনিয়মের’ কারণে কার্ড বা পাস কালো তালিকাভুক্ত হয়। তবে ফেরত পেতে দেরি হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ কর্তৃপক্ষ জানায়নি।
পাস কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণ কী
ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে ‘ঢাকা মেট্রোরেলের যাত্রীদের ক্ষতিগ্রস্ত, অকার্যকর ও কালো তালিকাভুক্ত ফেরতযোগ্য এমআরটি পাস এবং একক যাত্রার টিকিট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি’ শিরোনামের নীতিমালায় এমআরটি পাস কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণ উল্লেখ করা আছে। নীতিমালা বলছে, আপাতদৃষ্টিতে ঠিকঠাক মনে হলেও সিস্টেমে পাস কালো তালিকাভুক্ত দেখানো হয়। এ ধরনের পাস যাত্রীর ব্যবহারজনিত অনিয়মের কারণে ক্লিয়ারিং হাউসের মাধ্যমে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। পাস বাঁকা হয়ে গেলে, ভাঁজ পড়লে, কাটা, ফাটা, ভাঙা, ছিদ্র থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত বলে বিবেচিত হবে।
ঢাকা মেট্রোরেলের ভাড়া আদায় নির্দেশিকায় বলা আছে, এমআরটি পাস ব্যবহারে কোনো অনিয়ম করা হলে পাসটি ব্লকড হয়ে যায়।
কোন পাস কী কারণে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে, তা না দেখলে দেরির কারণ বলা কঠিন। ফরম পূরণ করে আবেদনের মাধ্যমে পাস ফেরত পাওয়া যায়। কোথাও কম, কোথাও বেশি সময় লাগেডিএমটিসিএলের (এমআরটি লাইন-৬) গণসংযোগ শাখার উপপ্রকল্প পরিচালক তরফদার মাহমুদুর রহমান
ফেরত পেতে কী করবেন, কত দেরি
নীতিমালায় আরও বলা আছে, কালো তালিকাভুক্ত এমআরটি পাস অবমুক্ত করতে কোনো যাত্রী আগ্রহী হলে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অফিস (ইএফও)’ অপারেটরের কাছে জমা দিতে হবে। ইএফও অপারেটর কালো তালিকাভুক্ত পাসের বিবরণ রেজিস্ট্রারে লিখে নেবেন। স্টেশন নিয়ন্ত্রক জমা করা কালো তালিকাভুক্ত এমআরটি পাস যাচাই করবেন এবং সিগন্যালিং অ্যান্ড টেলিকম অধিশাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন। সিগন্যালিং অ্যান্ড টেলিকম অধিশাখার কর্মকর্তা পাসটি অবমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসহ ক্লিয়ারিং হাউস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন।
এমআরটি পাস কালো তালিকায় পড়া নিয়ে ডিএমটিসিএলের (এমআরটি লাইন-৬) গণসংযোগ শাখার উপপ্রকল্প পরিচালক তরফদার মাহমুদুর রহমান গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাখের ওপর এমআরটি পাস বিক্রি হয়েছে। এমন কিছু অভিযোগ তো পাওয়া যাচ্ছেই। যাত্রী হয়তো ঢোকার সময় পাস ঠিকভাবে পাঞ্চ করলেন, কিন্তু বের হওয়ার সময় ঠিকভাবে পাঞ্চ হলো না। অনেক সময় পাসটি ক্ষতিগ্রস্ত থাকলে বা সফটওয়্যারের সমস্যা দেখা দিলেও কালো তালিকাভুক্ত হতে পারে।’
যতবার স্টেশনে খবর নিতে যাই, আমাকে বলা হয় তাঁদের কাছে তথ্য নেই। কার্ড ঠিক হলে জানাবে। কার্ডের দাম ২০০ টাকা থেকে সার্ভিস চার্জ ৫০ টাকা কেটে নিয়ে ১৫০ টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে আমাকে জানিয়েছে। তবে কার্ডে যে ব্যালেন্স আছে, তা পাব না। এটা কেমন কথা! ব্যালেন্স ৫০ টাকাই থাকুক, আর ৫০০ টাকাই থাকুক, আমি কেন ফেরত পাব না?’মীর মোফরাদ জাফর, যাত্রী
কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পর পাস পেতে দেরির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন পাস কী কারণে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে, তা না দেখলে দেরির কারণ বলা কঠিন। ফরম পূরণ করে আবেদনের মাধ্যমে পাস ফেরত পাওয়া যায়। কোথাও কম, কোথাও বেশি সময় লাগে।’
আড়াই মাসেও পাস ফেরত না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মীর মোফরাদ বলেন, ‘যতবার স্টেশনে খবর নিতে যাই, আমাকে বলা হয় তাঁদের কাছে তথ্য নেই। কার্ড ঠিক হলে জানাবে। কার্ডের দাম ২০০ টাকা থেকে সার্ভিস চার্জ ৫০ টাকা কেটে নিয়ে ১৫০ টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে আমাকে জানিয়েছে। তবে কার্ডে যে ব্যালেন্স আছে, তা পাব না। এটা কেমন কথা! ব্যালেন্স ৫০ টাকাই থাকুক, আর ৫০০ টাকাই থাকুক, আমি কেন ফেরত পাব না?’
পাস ফেরত না পেয়ে আপাতত মীর মোফরাদ একটি র্যাপিড পাস করেছেন। এই পাসের মাধ্যমে মেট্রোরেল ও কিছু বাসে ই-টিকিটিং পদ্ধতিতে যাতায়াত করা যায়। এ ছাড়া পুরো বিষয়টি জানিয়ে ভোক্তা অধিকার আইনে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন।
দ্রুত যাতায়াত–সুবিধার কারণে শুরু থেকেই রাজধানীবাসীর কাছে মেট্রোরেল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেবা মানসম্মত রাখতে এ ধরনের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান চান মীর মোফরাদ ও অন্য যাত্রীরা।