পার্বত্য তিন সংসদীয় আসনে আলাদা করে এক দিনে ভোটের প্রস্তাব
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে পার্বত্য তিন সংসদীয় আসনে আলাদা একটি দিনে ভোট করা, ভোটকেন্দ্রের দূরত্ব বিবেচনায় বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা করা, নির্দলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, দলিত, প্রতিবন্ধীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের প্রতিনিধিরা।
আজ বুধবার নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে এই প্রতিনিধিরা। তাঁদের সমস্যা ও প্রস্তাব তুলে ধরেন। সভায় কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদারসহ অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে সভাটি হয়।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, আদিবাসী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (আসুস), বাংলাদেশ দলিত হিউম্যান রাইটসসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধারা আজকের মতবিনিময়ে অংশ নেন।
সভায় যেসব প্রস্তাব উঠে আসে, তার মধ্যে আছে ভোটের সময় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আক্রমণের অভিযোগ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া, পেশিশক্তি ব্যবহারে দোষী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের বিধান করা, পার্বত্য তিন জেলায় ভোটারদের ‘ভোটার এডুকেশন’–এর ব্যবস্থা করা, পার্বত্য এলাকায় ভোটকেন্দ্রের দূরত্ব বিবেচনায় বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য পোস্টাল ভোট বা ডিজিটাল ভোটের ব্যবস্থা করা, নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য পার্বত্য তিন সংসদীয় আসনে আলাদা একটি দিনে ভোট করা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করা, উচ্চকক্ষেও সরাসরি ভোটে নির্বাচন করা ইত্যাদি। এ ছাড়া সমতল ও পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সমস্যার বিষয়ও আলোচনায় আসে। অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রে পদবি ঠিকভাবে লেখা হয়নি, এটা সংশোধনও করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে পাহাড়ে অনেকে ভোটার হননি।
মতবিনিময় শেষে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাঁদের কমিশন এখনো সুপারিশ চূড়ান্ত করেনি। তবে আদিবাসী, দলিত বা পিছিয়ে পড়া কোনো গোষ্ঠী যেন কোনো রকম বৈষ্যমের শিকার না হয়; তাদের ভোটাধিকার থেকে শুরু করে আইনি অধিকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, তা দেখা হবে।
ভোটার তালিকা নিয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও অন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সমস্যা আছে উল্লেখ করে কমিশনের প্রধান বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে তাঁদের সমস্যা আছে। এগুলো যাতে সংশোধন করা হয়, এ বিষয়ে সংস্কার কমিশন সুপারিশ করবে। তিনি বলেন, কমিশন সমতলে কত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, পাহাড়ে কত, দলিতদের সংখ্যা কত—এ ধরনের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সুস্পষ্ট ধারণা পেতে চান।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা, উচ্চকক্ষ কীভাবে নির্বাচিত হবে, সংরক্ষিত নারী আসনে ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে সরাসরি ভোট করা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সরাসরি ভোটে হবে কি না—এ ধরনের অনেক প্রস্তাব তাদের মতবিনিময় সভাগুলোতে এসেছে। তিনি বলেন, প্রস্তাব বাস্তবায়নের এখতিয়ার সংস্কার কমিশনের নেই। এগুলো সরকার বা নির্বাচন কমিশন করবে। তার আগে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। সেখান থেকে হয়তো নির্বাচনের একটি পথনকশা আসবে।