স্মারক বক্তৃতা, গান, আবৃত্তিতে আলী যাকেরকে স্মরণ
স্মারক বক্তৃতা, গান, আবৃত্তিতে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সন্ধ্যায় স্মরণ করা হলো দেশের নাট্যাঙ্গনের কৃতী ব্যক্তিত্ব আলী যাকেরকে। মহিলা সমিতি মিলনায়তনে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক আয়োজনে স্মরণ করা হয় এই নাট্যব্যক্তিত্বকে।
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সমবেত জনকে স্বাগত জানান আলী যাকেরের দীর্ঘদিনের মঞ্চ ও কর্মজীবনের সহযোগী নন্দিত নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আলী যাকের ছিলেন বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী। বাংলাদেশে তিনি নবনাট্য আন্দোলনের অগ্রণীদের অন্যতম। ঢাকায় দর্শনীর বিনিময়ে নাটক মঞ্চায়নের তিনি পথিকৃৎ। অভিনয় ও নির্দেশনায় তিনি যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। কৃতী আলোকচিত্রী। প্রবন্ধ ও কলাম লিখেছেন। অংশ নিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। সংগঠক ও ব্যবসায়ী হিসেবেও আলী যাকের সাফল্যের পরিচয় রেখেছেন। এই আয়োজনটি হবে অনাড়ম্বর, তবে হৃদয়ের নিখাদ প্রীতিতে উষ্ণ।
আলী যাকেরের জন্ম ও মৃত্যু নভেম্বরে। ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বরে আর ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর। ‘স্মৃতিতে স্মরণে আলী যাকের’ নামের এই আয়োজনটিতে ছিল দুটি পর্ব। প্রথম পর্বে স্মারক বক্তৃতা। কলকাতার বিখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা বিভাস চক্রবর্তী ছিলেন স্মারক বক্তা। তিনি কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের নাটকের ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তাতে কলকাতার পেশাদার রঙ্গালয়, তারপর রাজনৈতিক নাটক, গণনাট্য সংঘ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শেক্সপিয়ারের নাটক, ইউরোপীয় নাটক, গ্রুপ থিয়েটার চর্চা থেকে হালের নাট্যচর্চার বিবর্তন ও পরিপ্রেক্ষিত উঠে আসে। পরে তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক সারা যাকের।
দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই আলী যাকেরের জীবন নিয়ে ‘বিরাজ সত্য সুন্দর’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। বেশ পরিপাটি আর গোছানো ছিল স্মরণের এই পর্বটি। আগুনের পরশমণি গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন কায়াশ্রমের শিল্পীরা। এরপর অনুষ্ঠান এগিয়ে চলেন আলী যাকেরের জীবনভিত্তিক রচনা ‘সেই অরুণোদয় থেকে’ থেকে পাঠ ও তার ফাঁকে ফাঁকে আলী যাকেরের প্রিয় গান, কবিতার আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনা।
জীবনানন্দ দাশের ‘ক্যাম্পে’ কবিতাটি আবৃত্তি করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। নিমা রহমান আবৃত্তি করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তুমি কি কেবলই ছবি’ ও ‘এমন দিনে’। খায়রুল আনাম শাকিল গেয়েছেন নজরুলসংগীত ‘শূন্য এ বুকে’; রবীন্দ্রসংগীত ‘খেলার সাথি গেল যে খেলার বেলা’ গেয়েছেন অভয়া দত্ত। মুকুন্দ দাসের ‘ভয় কী মরণে’ গানটির সঙ্গেও ছিল সমবেত নৃত্য। পাঠে অংশ নিয়েছেন নাসিরুল হক, পান্থ শাহরিয়ার, ফকরুজ্জামান চৌধুরী, মুস্তাফিজ শাহীন, মাহফুজ রিজভী। শেষ পরিবেশনাটি ছিল আসাদুজ্জামান নূরের। তিনি সৈয়দ শামসুল হকের ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ কাব্যনাটকের ভূমিকাংশ আবৃত্তি করে শোনান।
সারা যাকের তাঁর সংক্ষিপ্ত কথনে বলেন, আলী যাকের ছিলেন নাগরিকের সব সদস্যের প্রাণের মানুষ, ছিলেন তাঁদের নেতা। তাঁর শূন্যতা পূরণ হবে না, তবে তাঁর দেখানো পথ ধরেই অব্যাহত থাকবে এগিয়ে চলা। অশীতিপর বয়সে কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে স্মারক বক্তব্য দেওয়ার জন্য বিভাস চক্রবর্তীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন তিনি।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নায়লা তারান্নুম।