২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ভাষার ভেতর লেগে থাকে যাপিত জীবন

আজাদ বুলবুল সম্পাদিত ‘বিশ্বজিৎ চৌধুরীর কথাসাহিত্য’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে বই হাতে অতিথিরা। শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় চট্টগ্রাম নগরের প্রেসক্লাবের আবদুল খালেক মিলনায়তনেছবি: জুয়েল শীল।

‘একেকজন লেখক একেকটা অঞ্চলজুড়ে থাকেন। সেই অঞ্চলের ভাষা, ভাষার ভেতরে মানুষের সংস্কৃতি, মানুষের জীবনাচার—সবকিছুই আছে। সাহিত্য থেকে ইতিহাস নির্মাণের কথা রণজিৎ গুহ বলেছিলেন। কারণ, সাহিত্যের রং হচ্ছে ভাষা। আর ভাষার গায়ে লেগে থাকে আমাদের আগ্রহ, সংগ্রাম, যাপিত জীবন। বিশ্বজিৎ চৌধুরীও তাঁর নিজস্ব ভাষার মাধ্যমে আমাদের প্রতিদিনকার জীবনযাপন, আমাদের স্বাধীনতা ও ভাবনা তুলে এনেছেন।’ 

শুক্রবার বিকেলে লেখক আজাদ বুলবুল সম্পাদিত ‘বিশ্বজিৎ চৌধুরীর কথাসাহিত্য’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুজিব রাহমান এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম নগরের প্রেসক্লাবের প্রকৌশলী আবদুল খালেক মিলনায়তনে এ প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে মুখ্য আলোচক ছিলেন কবি ও নাট্যজন শিশির দত্ত। মুজিব রাহমান ছাড়াও আলোচক হিসেবে আরও ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মহীবুল আজিজ, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লার উপপরিচালক সানাউল্লাহ নূর। পুবাকাশের সম্পাদক মাঈন উদ্দিনের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক আজাদ বুলবুল। অনুভূতি প্রকাশ করেন কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন শিক্ষক ও গবেষক সামসুদ্দিন শিশির ও লেখক বিচিত্রা সেন।

আলোচনায় মুজিব রাহমান আরও বলেন, ‘হারুকি মুরাকামির লেখায় পাওয়া যায়, বৃষ্টির সঙ্গে ইলিশ ঝরছে। সাহিত্যে আসলে এই জাদুবাস্তবতা তৈরি করা সম্ভব। বিশ্বজিৎ চৌধুরীর লেখায়ও আমরা জাদুবাস্তবতার খোঁজ পাই।’

আজাদ বুলবুল সম্পাদিত ‘বিশ্বজিৎ চৌধুরীর কথাসাহিত্য’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে দর্শকদের মধ্য থেকে একজন আলোচনায় অংশ নেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় চট্টগ্রাম নগরের প্রেসক্লাবের আবদুল খালেক মিলনায়তনে
ছবি: জুয়েল শীল

মহীবুল আজিজ বলেন, কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ধরা পড়েছে বিশ্বজিৎ চৌধুরীর উপন্যাস ‘নার্গিস’-এ। যাঁরা নজরুলকে গভীরভাবে পড়েছেন, তাঁরা ‘নার্গিস’ উপন্যাসটি একভাবে উপলব্ধি করবেন। আবার যেসব পাঠক নজরুলের লেখালেখির সঙ্গে তেমন একটা পরিচিত নন, তাঁরা আরেকভাবে ‘নার্গিস’ উপন্যাসটি উপভোগ করবেন। সাহিত্যে ডিসকোর্স তৈরি করা, একজন লেখককে পুনরায় তৈরি করার কাজ খুবই কঠিন। কিন্তু প্রখর কাব্যবোধের মাধ্যমে বিশ্বজিৎ চৌধুরী সেই কাজ করেছেন।

নাট্যজন শিশির দত্ত বিশ্বজিৎ চৌধুরীকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণা করেন। পাশাপাশি সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কবিতার শহর। কবিতা যেখানে গিয়েছিল, চট্টগ্রামের কথাসাহিত্য সেখানে যেতে পারেনি। কিন্তু কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী সে অভাব ঘুচিয়েছেন। পাঠকের পাঠের মাধ্যমে বিশ্বজিৎ চৌধুরী জনপ্রিয় হয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর লেখায় ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো উঠে এসেছে। এসব লেখা লিখতে যে সাহসিকতার দরকার হয়, তা তিনি দেখিয়েছেন। বিশ্বজিৎ চৌধুরীর লেখার জগৎটা অন্য রকম। নাগরিক জীবন, আশপাশ তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে।

একজন ঔপন্যাসিকের সঙ্গে পাঠকের গভীর সম্পর্ক তৈরি হয় উল্লেখ করে শিশির দত্ত বলেন, চিন্তা তৈরি করে দেওয়া কিংবা মানুষের ভেতরে বোধের সৃষ্টি করার কাজটি ঔপন্যাসিকেরা পারেন। উপন্যাসের পাঠকেরা চরিত্রকে অনেক সময় ধারণ করতে চান। কিন্তু কবিতার মধ্যে অনেক সময় সে সুযোগ পাওয়া যায় না।  বিশ্বজিৎ চৌধুরীর গল্প, কবিতা কিংবা উপন্যাস পাঠককে একটা ঘোরের মধ্যে  নিয়ে যায়। তাঁর অঙ্কিত চরিত্রেরা পাঠককে ধরে রাখে। মুগ্ধ করে।

অনুভূতি প্রকাশ করে বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘লেখালেখি জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। একটা সময় ছড়া লিখতাম। তারপর গল্প ও উপন্যাস লেখা। এভাবেই জড়িয়ে যাওয়া।’