এখন আর বসে থাকার সময় নেই: বিতার্কিকদের সমাবেশে বক্তারা

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত বিতার্কিকদের সমাবেশ। আজ ৩ আগস্ট শনিবারছবি: প্রথম আলো

‘এখন আর মায়াকান্নার জায়গা নেই। এখন আমাদের শক্ত করে কথা বলা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, ছাত্র আন্দোলন এখন গণ–অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে। সর্বস্তরের জনগণ কোনো না কোনোভাবেই এতে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এখন আর বসে থাকার সময় নেই।’

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত বিতার্কিকদের সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এ সমাবেশের আয়োজন হয়। এতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিতার্কিকরা অংশ নেন।

এখন আর মায়াকান্নার জায়গা নেই উল্লেখ করে নগরের বেসরকারি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির মিনহাজ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের ওপরে যেভাবে দমন–পীড়ন চালানো হয়েছে, এটা ‘রেডলাইন ক্রস’। অর্থাৎ সরকার জনগণের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ করে এমন অস্ত্র ব্যবহার করেছে, যেটা যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহার করা যায় না। এর বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে হবে। শিক্ষক–শিক্ষার্থীকে গণগ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত শিক্ষার্থী ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক আদনান মান্নান বলেন, ‘হৃদয় ছিল মেধাবী ছাত্র। তার বাবা কাঠমিস্ত্রি, মা গৃহকর্মী। তার মরদেহ যখন হস্তান্তর করা হয়, তখন নথিতে সই করার মতোও কেউ ছিল না। কারণ, হৃদয় এমন একটি পরিবার থেকে এসেছে, যেখানে সে–ই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে। হৃদয় তার পরিবারকে বাঁচানোর স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু আপনারা তাকে হত্যা করেছেন। একটি পরিবারকে হত্যা করছেন। মা–বাবাকে হত্যা করেছেন। আমি হৃদয়ের হত্যার বিচার চাই। আমি প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। প্রতিটি গ্রেপ্তারের বিচার চাই।’

অধ্যাপক আদনান মান্নান বলেন, ‘দুদিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে গ্রেপ্তারের কথা শুনে আমরা পাঁচলাইশ থানায় গেলাম। গিয়ে শুনলাম তাকে আদালতে চালান করে দেওয়া হয়েছে। শুনলাম তাকে ১৩টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। কেন আপনি আমার ছাত্রের নামে মামলা দেবেন? কেন আমার সন্তানের নামে মামলা দেবেন? নির্দিষ্ট একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে অন্য একটি সংগঠনের সদস্য ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে, এটি কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।’

বিতার্কিকদের সংগঠন দৃষ্টি চট্টগ্রামের সহসভাপতি সাবের শাহ বলেন, ‘আমরা বিতার্কিকরা সব সময় যুক্তির কথা বলি। এভাবে অযৌক্তিকভাবে হত্যা, গণগ্রেপ্তার আমরা কখনোই সমর্থন করি না। আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। তাই আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। আমরা প্রতিটি হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

কর্মসূচির একপর্যায়ে মাইক হাতে নিহত ১০ শিক্ষার্থীদের নাম ডাকেন অধ্যাপক আদনান মান্নান। এর মধ্যে ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ ও চার বছরের শিশু আবদুল আহাদও ছিল। শ্রেণিকক্ষে যেভাবে শিক্ষার্থীদের ‘রোলকল’ করা হয়, এভাবেই নাম ডাকেন আদনান মান্নান। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা তখন ‘ইয়েস স্যার’ বলে সাড়া দেন। এ সময় উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।

দৃষ্টি চট্টগ্রামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আরাফাতের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব, সাবেক বিতার্কিক জাহেদুল ইসলাম, হাসিব খান, মেহেদী নিকাশ, সুমাইয়া ইসলাম, মুন্না মজুমদার প্রমুখ।