আবাসন–সংকট সমাধানের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা আজ রোববার ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। পরে আবাসিক হলে বৈধ আসন আসন পাওয়াসহ ৭ দফা দাবিতে তাঁরা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন।
ছাত্রীরা আজ দুপুর ১২টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরে যান। তাঁরা ‘ভিসির বাংলো ক্যাম্পাসে, আমরা কেন বাহিরে?’, ‘আর কত টালবাহানা, সিট নিশ্চয়তা ছাড়া যাব না’, ‘হলে সিট যদি না পাই, ভিসির বাংলোয় ঠাঁই চাই’, ‘ক্লাসরুমে আনার আগে, থাকার জায়গা দিতে হবে’, ইত্যাদি স্লোগান দেন। পরে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
ছাত্রীরা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আবাসিক হলগুলো থেকে ছাত্রলীগের দখলদারি আর নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি হল থেকে ‘গণরুম’ ও ‘গেস্টরুম’ বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে ছাত্রীদের হলে ‘গণরুম’ প্রথা বাতিল করা হয়নি। ছাত্রীদের অভিযোগ, বেশ কিছু হলের গণরুমে নতুন করে ‘বাঙ্কবেড’ (দোতলা শয্যা) দিয়ে আগের চেয়ে বেশি ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সুফিয়া কামাল হল, শামসুন নাহার হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে গণরুমগুলোয় বাঙ্ক বেড দেওয়া হয়েছে। শামসুন নাহার হলের কোনো কোনো গণরুমে ৩০ জনের বেশি ছাত্রী থাকছেন।
ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের আন্দোলনরত ছাত্রী নূজিয়া হাসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বারবার আশ্বাস দেওয়ার পরও ছাত্রীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত না করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা। আমরা চাই দ্রুত ছাত্রীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হোক।’
প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো তুলেছেন, এর কয়েকটি ইতিমধ্যে সমাধান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে। বাকিগুলোর জন্যও চেষ্টা করা হবে।
স্মারকলিপিতে ছাত্রীদের উল্লেখ করা দাবিগুলো হলো: ১. প্রথম বর্ষেই শতভাগ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে; ২. অবিলম্বে গণরুম বিলুপ্ত করে পর্যাপ্ত আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে; ৩. নতুন ছাত্রী হল চালু না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন ভবনে বা ক্যাম্পাস–সংলগ্ন এলাকায় ভবন ভাড়া নিয়ে ছাত্রীদের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে; ৪. ছাত্রীদের নতুন হল মূল ক্যাম্পাসের ভেতরেই নির্মাণ এবং দ্রুত নির্মাণকাজ দৃশ্যমান করতে হবে। ৫. অনতিবিলম্বে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এবং হলের ডাইনিংসহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণের অনুমতি দিতে হবে; ৬. ক্রমান্বয়ে প্রতিটি হলে ডাবলিং ব্যবস্থা তুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসনের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে; এবং ৭. নতুন ভবনে স্থানান্তরের মাধ্যমে কুয়েত মৈত্রী হল এবং শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রীদের ধারাবাহিকভাবে মূল ক্যাম্পাসে নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য সায়মা হক বিদিশা আজ প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ একটা স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। আগামীকাল প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাঁদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন। প্রশাসন কী কী বিষয় চিন্তা করেছে তাদের জন্য এবং সামনে তাদের সংকটগুলো কিভাবে সমাধান করা হবে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।