ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন দিল দুদক
গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিলের জন্য সোমবার এ অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
দুদক সূত্র জানায়, ড. ইউনূস ছাড়া অভিযোগপত্রে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসানের নাম রয়েছে।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কামরুল হাসানের নাম তদন্তের পর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাকি ব্যক্তিদের নাম এজাহারে ছিল।
দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে গত বছরের ৩০ মে মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারায় অপরাধ।
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ–সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠিয়েছিল। দুদক দীর্ঘ অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে মামলা করে। সেই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার অনুমোদন পাওয়া গেছে।
দুদক আরও জানায়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংক হিসাব খোলার। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৮ মে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয় বলে জানানো হয়।
দুদক বলছে, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনার লভ্যাংশ বিতরণের জন্য শ্রমিক ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে একই বছরের ২৭ এপ্রিল একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই চুক্তিতে ৮ মে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে বলে দেখানো হয়, যা বাস্তবে অসম্ভব। কাগজপত্র নকল করে এটা করা হয়।
দুদক সচিব বলেন, চুক্তি অনুযায়ী এবং ১০৮তম বোর্ড সভার (গ্রামীণ টেলিকম) সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। তিনি আরও বলেন, কর্মচারীদের লভ্যাংশের টাকা বিতরণ না করে তাঁদের না জানিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়।
অবশ্য ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, কর্মীরা লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা চেয়ে আদালতে গেলে তাঁদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়। সেই সমঝোতার ভিত্তিতে আইনজীবীদের খরচ বাবদ কর্মীরা ওই ২৫ কোটি টাকা অগ্রিম চেয়েছিলেন। সেটিই দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কর্মীদের লিখিত সম্মতি আছে।
আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, কর্মীরা ব্যাংক হিসাব খুলতে দেরি করায় চুক্তিতে সেই জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছিল। পরে দুই পক্ষ সেখানে ব্যাংক হিসাব নম্বর বসায়। সেটি সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে।
লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা টাকা চেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ কর্মী শতাধিক মামলা করেছিলেন। তাঁরা হাইকোর্টেও গিয়েছিলেন। পরে তাঁদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়। ড. ইউনূসের আইনজীবীরা বলছেন, সমঝোতার মাধ্যমে পাওনা পেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা ২০২২ সালে মে মাসে মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। পরে পাওনা পরিশোধের বিষয়টিকেই অর্থ আত্মসাৎ ধরে দুদক মামলা করে।
ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরকারের নির্দেশে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর দুদকে চিঠি দিয়েছে। যেটা তারা পারে না। আর ড. ইউনূস যখন এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন, তখন তড়িঘড়ি করে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এর মাধ্যমে ড. ইউনূসকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে ১ জানুয়ারি ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন শ্রম আদালত। সেই সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসসহ চারজনের করা আপিল ২৮ জানুয়ারি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। তাঁরা স্থায়ী জামিন পেয়েছেন।