জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি, জেলায় জেলায় বিক্ষোভ
জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা আর পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হয়েছে। দাম বাড়ানোর এ খবরে রাত ১২টা বাজার আগেই জেলায় জেলায় পেট্রলপাম্প বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা। প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সিলেটে পাম্পগুলো রাত ১২টা বাজার আগেই বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন মোটরসাইকেলচালকেরা। সিলেটের চারটি জ্বালানি তেল বিক্রি করা পাম্প ঘুরে দেখা গেছে, আলো নিভিয়ে কর্তৃপক্ষ চলে গেছে। পাম্পগুলোতে কয়েক শ মোটরসাইকেলের লাইন। চারটি পাম্পের একটিতে রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার নর্থ ইস্ট অয়েল ফিলিং স্টেশন, জিন্দাবাজার এলাকার জালালাবাদ ট্রেডার্স ও সোবাহানীঘাট এলাকার একটি পাম্পের আলো নেভানো এবং পাম্প বন্ধ অবস্থায় দেখা গেছে।
মোটরসাইকেল আরোহীদের অভিযোগ, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল বিক্রি করা হয়েছে। হঠাৎই তেলের দাম বাড়ানোর খবরে পাম্পমালিক ও কর্মচারীরা তেল বিক্রি বন্ধ করে দেন। সেই সঙ্গে পাম্পগুলোর আলো নিভিয়ে বন্ধ করে চলে যান। এতে পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল নিতে আসা মোটরসাইকেল ও যানবাহনের চালক এবং আরোহীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
রাত ১১টার দিকে সিলেট নগরের সোবহানীঘাট এলাকার বেঙ্গল গ্যাসোলিন অ্যান্ড সার্ভিস ফিলিং স্টেশনের সামনে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এ সময় পাম্প কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁদের চালকদের বাগ্বিতণ্ডা করতে দেখা যায়। পাম্পের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পাম্পমালিক বিক্রি বন্ধ করে রাখতে বলেছেন। এতে আমাদের কিছু করার নেই। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল ও যানবাহনের চালকেরা পাম্পের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।’
রাত পৌনে ১১টার দিকে সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার নর্থ ইস্ট অয়েল পাম্পেও মোটরসাইকেলের চালকদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। তেল না পেয়ে একপর্যায়ে তাঁরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
সোবহানীঘাট এলাকার বেঙ্গল গ্যাসোলিন অ্যান্ড সার্ভিসিং স্টেশনে পেট্রল নিতে আসা নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা ফাহাদ মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এ খবর শোনার আগে পাম্পে এসেছিলাম। কিন্তু তারা তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছি।’
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ বলেন, পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল না পেয়ে অনেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে পুলিশ মাঠে রয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেটের পলিটেকনিক এলাকার সেনা ফিলিং স্টেশনে রাত সাড়ে ১১টার দিকে দেখা যায়, কমপক্ষে ২০০ মোটরসাইকেলচালক তেল কেনার অপেক্ষায়। এ ছাড়া ৫০টির মতো ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস অপেক্ষায় রয়েছে।
আরিফুর রহমান নামের এক মোটরসাইকেলচালক প্রথম আলোকে বলেন, তেলের দাম বাড়ানো খবর শুনে তিনি তেল কিনতে আসেন। প্রায় ৪৫ মিনিট অপেক্ষার পর তেল পান। তাঁর কাছে ২০০ টাকার তেল বিক্রি করেছে। এর বেশি বিক্রি করেনি।
রাত ১২টার দিকে গণি বেকারি এলাকার আরেকটি ফিলিং স্টেশন কিউসি ট্রেডিংয়ে গিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সেখানে তেল নিতে এসে কমপক্ষে ১০ জনকে ফেরত যেতে দেখা যায়।
পেট্রল ও অকটেন বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ায় সাতক্ষীরা শহরের এ বি খান পেট্রলপাম্পের সামনে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন মোটরসাইকেলের চালকেরা। রাত সোয়া ১১টার দিকে তাঁরা রাস্তা অবরোধ করলে ১৫ মিনিট পর পুলিশ এসে তাঁদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।
রাজশাহীতে পেট্রলপাম্পে তেল দেওয়া বন্ধ করায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেছেন মোটরসাইকেলচালকেরা।
গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের প্রায় সব ফিলিং স্টেশন শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন দুই শতাধিক গ্রাহক।