ঢাকা ও এর আশপাশ
সারিঘাট, কেরানীগঞ্জ
দেখার কী আছে: সারিঘাট হলো কাশফুলের স্বর্গরাজ্য। এখানকার দিগন্তজোড়া শুভ্র কাশফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। পাশেই টলটলে স্বচ্ছ পানির খাল। ঠিক খালের ধার ঘেঁষেই প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠেছে অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত এই ফুল। খালের পাড়ে পাওয়া যায় ভাড়া নৌকা। রং–বেরঙের নৌকায় খালে ঘুরে বেড়ানো যায়।
কীভাবে যাবেন: রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকা থেকে সারিঘাটের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। পোস্তগোলা এলাকা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সরাসরি সারিঘাটে যেতে লাগবে ২০০-৩০০ টাকা। এ ছাড়া পোস্তগোলা থেকে হাসনাবাদ বিআরটিএ এলাকায় নেমে রিকশায়ও যাওয়া যাবে সারিঘাটে। ভাড়া নেবে ৪০-৫০ টাকা।
খাওয়াদাওয়া: সারিঘাটে দর্শনার্থীদের ঢলকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। যেখানে দর্শনার্থীরা বসে খাবার খেতে খেতে দেখতে পাবেন কাশফুলের সৌন্দর্য।
ঝিলমিল, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ
দেখার কী আছে: দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নাজিরেরবাগ এলাকায় রাজউকের ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প এলাকায় রয়েছে শুভ্র কাশফুলের সমারোহ। সাধারণত ছুটির দিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন এখানে আসেন।
কীভাবে যাবেন: জুরাইন পোস্তগোলা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ঝিলমিল এলাকায় আসতে জনপ্রতি লাগে ৪০ টাকা। দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। অটোরিকশা রিজার্ভ করে এলে লাগবে ১৮০-২০০ টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর জিপিও, গুলিস্তান, পুরান ঢাকার বংশাল ও তাঁতীবাজার থেকে আসতে হলে কেরানীগঞ্জ রুটে চলাচলকারী দিশারী পরিবহন, আকাশ পরিবহন কিংবা বিআরটিসির দোতালা বাসে উঠতে হবে। এসব বাস কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া চৌরাস্তা মোড় এলাকা পর্যন্ত আসে। দূরত্ব প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার। সেখানে নামার পর অটোরিকশায় ৩০-৪০ টাকায় ঝিলমিল এলাকায় যাওয়া যাবে।
খাওয়াদাওয়া: ঝিলমিলের অভ্যন্তরে রয়েছে অস্থায়ী কিছু খাবারের দোকান। যেখানে ঝালমুড়ি, আইসক্রিমসহ হালকা নাশতা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঝিলমিল থেকে অটোরিকশায় পুনরায় চুনকুটিয়া চৌরাস্তা মোড়ে এলে দেখা মিলবে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ও ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানের। এর মধ্যে অন্যতম হলো পাকঘর, বাসন্তী চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, স্টিং ক্যাফে ও সেফা রেস্টুরেন্ট। সেখানে বাংলা, থাই ও চায়নিজসহ বিভিন্ন রকমের খাবার পাওয়া যায়।
হযরতপুর, কেরানীগঞ্জ
দেখার কী আছে: হযরতপুর এলাকার ঢালিকান্দী, পাড়াগ্রাম ও মধুরচর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে রয়েছে কাশবন। এখানে ছোট ট্রলার বা খেয়ানৌকায় চড়ে কাশবনের কাছে যাওয়া যায়।
কীভাবে যাবেন: মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে হযরতপুরের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া ৫০ টাকা। রিজার্ভ করে এলে লাগবে ২৫০ টাকা।
খাওয়াদাওয়া: মধুরচর ও ঢালিকান্দী এলাকায় নদীর তীর ঘেঁষে রয়েছে কিছু মুদিদোকান। সেখানে নৌকা ভিড়িয়ে চা খাওয়া যায়।
নতুন সোনাকান্দা, কেরানীগঞ্জ
দেখার কী আছে: কেরানীগঞ্জের লাখিরচর ও নতুন সোনাকান্দা এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর তীরে রয়েছে কাশবন। নদীর তীরে শুভ্রতা ছড়ানো কাশফুল দেখলে মনে হবে নদী যেন কাশফুলের সাদার সঙ্গে মিশে গেছে। ধলেশ্বরী নদীর তীর ধরে হেঁটে যাওয়া যায় কলাতিয়া খাড়াকান্দি এলাকা পর্যন্ত।
কীভাবে যাবেন: রাজধানীর গুলিস্তান থেকে কেরানীগঞ্জ সিটি সার্ভিস বাসে কেরানীগঞ্জের তুলসিখালী সেতুর সামনে নামতে হবে। দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। জনপ্রতি ভাড়া ৭০ টাকা। সেতুর নিচে নামলেই দেখা যাবে অজস্র কাশফুল।
বছিলা ও মধুসিটি, কেরানীগঞ্জ
দেখার কী আছে: কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর, বছিলা ও মধুসিটি আবাসন প্রকল্পের ভেতরে রয়েছে অসংখ্য কাশফুল। দেখে যেন মনে হবে সাদার মেলা। মধুসিটিতে প্রবেশপথে রয়েছে মিনি শিশুপার্ক ও হরেক রকমের খাবারের দোকান।
কীভাবে যাবেন: মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে মধুসিটি ও বছিলা এলাকার দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা। অটোরিকশা রিজার্ভ করলে লাগবে ১৫০ টাকা।
খাওয়াদাওয়া: মধুসিটি ঘেঁষে অনেক রকমের খাবারের রেস্তোরাঁ আছে।
দিয়াবাড়ি
কীভাবে যাবেন: মিরপুর থেকে গেলে মেট্রোরেলে যাওয়াই ভালো। মেট্রোরেলের ‘উত্তরা সেন্টার স্টেশনে’ নেমে রাস্তার পূর্ব পাড়ে খানিকটা পথ এগোলেই রাজউকের খালি প্লটগুলোয় দেখা যাবে কাশফুল।
আবার কেউ চাইলে মেট্রোরেলের উত্তরা ১ নম্বর স্টেশনেও নামতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কাশফুল দেখতে হলে ওই স্টেশন থেকে হেঁটে বা রিকশা ধরে খানিকটা দক্ষিণ দিকে (মিরপুরের দিক) এগোতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই ৩ নম্বর সেতুসংলগ্ন লেকপাড়ে (হাতের বাঁয়ে) দেখা যাবে আকর্ষণীয় কাশফুল।
খাওয়াদাওয়া: যেখানে কাশফুল সেখান থেকে অল্প দূরত্বেই রয়েছে বউবাজার। সেখানে পাওয়া যায় রকমারি খাবার। হাঁসের মাংস, গুরুর কালাভুনা, সামুদ্রিক মাছ, হরেক পদের পিঠা, চটপটি, ফুচকাসহ বিভিন্ন পদের চা। সেখান থাকে আরও কিছুটা উত্তর দিকে এগোলে পাওয়া যাবে বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক রেস্টুরেন্ট। সেখানেও রয়েছে নানা পদের খাবার।
বিনোদন: মেট্রোরেলের ৭৩ নম্বর পিলারের পাশে রয়েছে ‘নূর ফুড ক্যাফে অ্যান্ড কায়াকিং’ নামে একটি বিনোদনকেন্দ্র। সেখানে রয়েছে ভাসমান রেস্তোরাঁ, কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা, ছোটদের নাগরদোলা, বড়দের নাগরদোলা ও শিশুদের জাম্পিং গ্রাউন্ড। এ ছাড়া ৩ নম্বর সেতুসংলগ্ন লেকে রয়েছে বোট রাইডিংয়ের ব্যবস্থা।
আফতাবনগর ও পূর্বাচল
এ ছাড়া কাশফুল দেখার জন্য রাজধানীর মধ্যে জনপ্রিয় স্থান হচ্ছে আফতাবনগর। রামপুরা ব্রিজ থেকে পূর্ব দিকে পাঁচ কিলোমিটার গেলে কাশবনের দেখা পাওয়া যাবে। রামপুরা ব্রিজ থেকে উত্তর–পূর্ব দিকে গেলেও কাশফুল পাওয়া যাবে।
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৩০০ ফিটের রাস্তা ধরে এগোলে পূর্বাচলেও পাওয়া যাবে কাশফুল।
চট্টগ্রাম
অনন্যা আবাসিক প্রকল্প
দেখার কী আছে: কাশফুলের পাশপাশি আশপাশে কিছু বিস্তীর্ণ বিল রয়েছে।
কীভাবে যাবেন: চট্টগ্রাম নগরের যেকোনো স্থান থেকে অক্সিজেন মোড় যেতে হবে। সেখান থেকে রিকশা, অটোরিকশায় করে অনন্যা আবাসিক এলাকা এভারকেয়ার হাসপাতালের বিপরীত পাশে বিস্তীর্ণ কাশফুলের দেখা মিলবে।
খাওয়াদাওয়া: নাহার গার্ডেন রেস্তোরাঁ। এ ছাড়া অক্সিজেন মোড়ে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান রয়েছে।
সিলেট
টিলাগড় মিরাপাড়া, সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড
দেখার কী আছে: কাশবনটি খোলা মাঠের মতো। সেখানে ঘুরে বেড়ানো যাবে। মিরাপাড়া এলাকার কাশবন থেকে অল্প দূরেই গাজী বুরহান উদ্দিনের মাজার। কাশবন থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৫০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যাবে মাজারে। এর পাশেই কুশিঘাট এলাকায় সুরমা নদী। নদীর পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ওয়াকওয়ে’।
কীভাবে যাবেন: সিলেট নগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল কদমতলী অথবা রেলস্টেশন থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সরাসরি টিলাগড় মিরাপাড়ায় যাওয়া যাবে। ভাড়া পড়বে প্রায় ২০০ টাকা।
খাওয়াদাওয়া: টিলাগড় মিরাপাড়া এলাকার কাশবন ঘিরে কোনো রেস্তোরাঁ নেই। তবে আশপাশে ছোট কয়টি চা-শিঙাড়ার দোকান রয়েছে। ফুচকা, চটপটিও পাওয়া যায়। ভারী খাবারের জন্য টিলাগড় এলাকায় রেস্তোরাঁয় খাবার সেরে নিতে পারেন।
রাজশাহী
স্থানের নাম: কয়েক বছর ধরে পদ্মা নদীর চরে কাশফুল বেশি ফুটত। এবার এখনো পদ্মায় পানি বেশি। তেমন ফুল ফোটেনি। তবে রাজশাহী নগরের আরও বেশকিছু জায়গায় কাশফুল ফুটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নগরের বড়বনগ্রাম, নগরের জামালপুর, নগরের বিনোদপুরে বেতার মাঠ।
বড়বনগ্রাম: শহর থেকে একটু গ্রামীণ এলাকায় এর অবস্থান। শহর থেকে রিকশায় ১০০ টাকা ভাড়ায় কাশফুল দেখা যায়। মাঠের পাশেই রাস্তার ধারে খাবার দোকান আছে।
জামালপুর: এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই। শহর থেকে ২০-৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাওয়া যায়। এই মাঠের পাশেই রাস্তা। সেখানে মুখরোচক খাবারদাবার আছে।
বেতার মাঠ: এটিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বিনোদপুরে। এই মাঠকে ঘিরে কোনো খাবার দোকান না থাকলেও পাশেই বিনোদপুর বাজারে মুখরোচক সব খাবারই পাওয়া যায়।
সতর্কতা ও প্রস্তুতি
নিরাপত্তার দিকটিতে নজর রাখা চাই। দল বেঁধে কাশবনে দেখতে যাওয়াই ভালো। কারণ, কাশফুলের এলাকাগুলো একটু নির্জন হয়। চুরি, ছিনতাইয়ের ভয় থাকে। তাই সন্ধ্যার আগে ঘরে ফেরাই সমীচীন। আর কাশফুল ক্ষণস্থায়ী, এখন শরৎকাল শেষের পথে। কাশফুলও কমে এসেছে। দেখার জন্য আর অল্প কদিন সময় পাওয়া যাবে।
[তথ্য দিয়েছেন ইকবাল হোসেন, কেরানীগঞ্জ; আল আমিন, টঙ্গী; ফাহিম আল সামাদ, চট্টগ্রাম; শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী ও মানাউবী সিংহ, সিলেট]